কলকাতা: আদানি গোষ্ঠীকে (Adani Group) নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে দালাল স্ট্রিট। আদানিদের শেয়ারে গরমিলের অভিযোগ তুলেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ (Hindenburg Research) নামে একটি সংস্থা। আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে শেয়ার বাজারে এক অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অতীতে বাংলার বিনিয়োগ মানচিত্রেও আদানিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা গিয়েছে। নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বয়ং গৌতম আদানি (Goutam Adani)। বাংলার শিল্পের একাধিক ক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ করার কথা। এমন অবস্থায় সেই সব প্রকল্পগুলির কী অবস্থা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও সংস্থার অভ্যন্তরীণ গন্ডগোলের জন্য বাংলার কোনও প্রকল্পের উপর প্রভাব পড়বে না। প্রয়োজন হলে অন্য সংস্থাকে নিয়ে কাজ হবে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন কুণাল।
তাহলে কি আদানিদের এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে তৃণমূল? এমন জল্পনা আগেই উস্কে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়। আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধারদের গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন তিনি। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর আগেই যাতে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধাররা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেই জন্য তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। এমনকী পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা ও দেশের সব বিমানবন্দরে লুক আউট নোটিস জারি করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। প্রয়োজনে ইন্টারপোলকেও সতর্ক করা দরকার বলে মত সুখেন্দুর।
এদিকে গতকালই আবার নবান্নে মমতা-আদানি সাক্ষাৎ পর্বের ছবি হাতে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘আমি কোনও মন্তব্য করব না। সমঝদারো কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়।’ এরপর মমতা-আদানির ছবি হাতে শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল, ‘এবার তাজপুরের কী হবে? দেউচা পাচামির পাথর কে কিনবে? ইলেকটোরাল বন্ড কী করে আসবে?’ যদিও বর্তমান বিতর্কের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী-আদানির ছবি মিলিয়ে দেওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, ‘আদানির সঙ্গে কি নরেন্দ্র মোদীর ছবি নেই?’ কুণালের ব্যাখ্যা, যারা দেশের প্রথম সারির শিল্পগোষ্ঠী, তাদের যেমন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি রয়েছে, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও ছবি রয়েছে, তেমনই তারা যদি মনে করে বাংলায় বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে, তাহলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ছবি থাকতে পারে। সেই সঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র আরও বলেন, কোনও শিল্পগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ কোনও বিতর্কে নিয়ে যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ছবি জড়িয়ে কেউ কিছু বলেন, তাহলে তিনি ‘বদ্ধ পাগল’ ছাড়া আর কিছু নন।
আদানি গোষ্ঠী রাজ্যে যে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে শুভেন্দু গতকাল যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, এদিন তারও জবাব দেন কুণাল ঘোষ। তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘আদানি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিপজ্জনক একটি অভিযোগ এসেছে। আদানি গোষ্ঠীও তাদের বক্তব্য রেখেছে। সব মিলিয়ে একটি ডামাডোল চলছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজ্যের কিছু প্রকল্প, যেখানে আদানি গোষ্ঠীর কোনও ইনভল্ভমেন্ট রয়েছে… সেখানে এমন চিন্তা করার কোনও কারণ নেই সেই প্রকল্পগুলি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। একটি গোষ্ঠী এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার মানে এই নয় অন্য গোষ্ঠী এগিয়ে আসার জন্য অপেক্ষায় নেই। যদি তারা করতে পারেন, ভাল। যদি তারা করতে না পারে বা যদি কোনও জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে রাজ্য সরকার বিকল্প পথে যাবে।’
কুণালের সাফ বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার যে প্রকল্পগুলি করবে বলে ঠিক করেছে, কোনও একটি গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ কোনও গন্ডগোলের জন্য সেই প্রকল্পগুলি কখনও থেমে যাওয়ার মতো অবস্থায় যাবে না।’