দলের নেতা নেত্রীদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Image Credit source: TV9 Bangla
কলকাতা: তৃণমূলের সমস্ত প্রার্থীকে নিয়ে কালীঘাটে শনিবার বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীরা। ছিলেন দলের শীর্ষ নেতা, জেলা সভাপতিরা। এদিনের বৈঠক থেকে ঘোষণা করা হয়, লোকসভায় এবারও তৃণমূলের দলনেতা থাকছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই। লোকসভায় মুখ্যসচেতক থাকছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে রাজ্যসভায় দলনেতা হিসাবে ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ দলনেতা সাগরিকা ঘোষের নাম ঘোষণা করা হয়।
মমতা এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন
- আমি এখন দিল্লি যাচ্ছি না। তবে আমি ইন্ডিয়ার সমস্ত নেতাদের স্বাগত জানাচ্ছি কলকাতায় আসার জন্য।
- অভিষেক দেখা করেছে নেতাদের সঙ্গে খারাপ কী? কথাবার্তা তো ভাল। আমিও আগ্রহী। ওরা কলকাতায় কোনও বৈঠক ঠিক করলে আমি তো স্বাগত জানাব।
- আমাদের ৩৫টা। বিজেপি কয়েকটা ইলেকশন কমিশন আর অবজারভার দিয়ে লুঠ করেছে।
- বাংলার আন্দোলনের আঁচ আরও বাড়বে। ওই তো হেরে গিয়েছে দেখেছেন তো। সেই ১০০ দিনের কাজ নিয়ে অভিষেকরা যখন গিয়েছিল চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে না দেখা করে রাতের বেলা চুলের মুঠি ধরে সবক’টাকে নিয়ে গিয়েছিল। ভগবান হারিয়ে দিয়েছে। তবু আমি বলব, ঈশ্বর ওদের মঙ্গল করুন।
- এই আড়াই মাস তিন মাস ধরে ভোটের পদ্ধতি বদল হওয়া দরকার। এক মাসের মধ্যে তা শেষ হওয়া দরকার। উন্নয়নের কাজ যাতে ব্যাহত না হয়।
- শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তৃণমূল যাবে না। মানুষকে ধন্যবাদ জনাব, ওদের ভোট না দেওয়ায় জন্য। চন্দ্রবাবুরা আমাদের বন্ধু ভুলে যাবেন না। আমরা ওনাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখি।
- আমি সমস্ত সাংসদকে বলব, যে দলেরই হোন, নিজের নিজের দলকে শক্তিশালী করুন। এর ওর দল ভাঙার চেষ্টা করবে। বিজেপিকে বুঝতে হবে এবার, আপনার দলই ভেঙে যাবে। আমরা ভাঙব না, নিজেরাই চলে যাবে। অনেকে খুশি নয়, দেখছি তো।
- একক সংখ্যা গরিষ্ঠও নয়, ৪০০ পারও করেনি। বিল কীভাবে পাশ করবেন? দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি ছাড়া কীভাবে পাশ করবেন? আজ গোটা বিশ্বে চর্চা হচ্ছে বিজেপিকে নিয়ে। যত তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যায় ঠিক হবে।
- ইলেকশন কমিশনের ম্যানুপুলেশন হয়েছে। অবজারভারের ভূমিকা দেখা দরকার। এখানে সিআরপিএফ, এজেন্সি পাঠিয়ে দিয়েছে। একজন এসপি ৪৫ লক্ষ টাকা ধরতেই এসপি বদল।
- দ্বিতীয় আমরা নজরে রাখব। যত তাড়াতাড়ি দুর্বল এই সরকার ঘরে ফিরে যায়। এদের কাছে দেশের জন্য কিছুই নেই।
- দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। শেয়ার কীভাবে এত বেড়ে গেল যে একদিনে এত কিছু হল, এত টাকার মার্কেটিং হল? কে কে যুক্ত? শেয়ার বাজার আমি বুঝি না, তবে কাগজে দেখে বুঝেছি ডাল মে কুছ কালা হ্যয়। ভোটের দিন, গণনার দিন, গণনার আগের দিন যা যা হয়েছে টোটাল স্ক্যাম। বড় দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত হওয়া দরকার।
- আমাদের প্রথম কাজ ডেরেক, সাগরিকা ঘোষ, দোলা সেন, নাদিমের একটি দল হরিয়ানার কৃষকদের সঙ্গে দেখা করুক। আমরা তাঁদের পাশে আছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি করব, মিনিমাম প্রাইস সাপোর্ট দেওয়া হোক। যাঁর জন্য কৃষকরা লড়ছেন।
- তৃণমূলের পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপার্সন হিসাবে আমাকে মনোনীত করার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা থাকছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভায় মুখ্যসচেতক থাকছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি লিডার কাকলি ঘোষদস্তিদার। প্যানেল অব চেয়ারম্যান, স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানের নাম পরে বলব। আর রাজ্যসভায় দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ দলনেতা সাগরিকা ঘোষ, নাদিম চিফ হুইপ।
- আমরা এখন অনেক শক্তিশালী। সব দলই শক্তিশালী, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল। রাজ্যসভা লোকসভা দেখুন, আমরা ৪২।
- এনআরসি, ক্যা, ইউনিফর্ম সিভিল কোড যেগুলি গায়ের জোরে পাশ করানো হয়েছে। ভোটের ফলও বদলে দিয়েছে। অবজারভার যে এসেছিল, লোডশেডিং করে জেতা সিটেও হারিয়ে দিয়েছে। এত কিছুর পরও আমরা দেখছি। গ্যারান্টি কতটা কী হচ্ছে। আমরা দাবি করব, প্রত্যেক রাজ্যের যা পাওনা শীঘ্র দিতে হবে।
- এনডিএ আর ইন্ডিয়ার তফাত হল, সকলের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলি, যাঁরা ওখানে আছেন তাঁদের চাওয়াটাও বেশি আছে। কিন্তু ইন্ডিয়াতে যারা আছে আমরা কিছু চাই না। আমরা মানুষের ভাল, দেশের ভাল চাই। আমরা ডেডিকেটেড।
- শুধু ভয় দেখিয়ে চমকে ধমকে ১৪৭ জনকে তাড়িয়ে দিয়ে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেখিয়ে যে কোনও বিল পাশ করে দেবেন। এনআরসি নিয়ে আলোচনা চাইবে আমাদের লোকেরা। এনআরসি বাতিল করতে। নতুন সরকারের কাছে… নতুন সরকার আল্টিমেটলি ইন্ডিয়ারই হবে। যে কটা দিন থাকে একটু সামলাতে দিই, একটু দেখতে দিন নিজেদের কাকে কতদূর সন্তুষ্ট রাখতে পারছে।
- আমাদের সাংসদদের স্পষ্ট করেছি, আমাদের পারফরমেন্স নিয়ে। আমরা বসে থাকার জন্য যাচ্ছি না। ইন্ডিয়া ব্লক সবটা দেখছে। পরিবর্তন চাইছে সকলে। এত বড় হারের পর মোদীবাবুর উচিত ছিল এটা অন্য কাউকে ছেড়ে দেওয়া।
- মোদীবাবুর হারটা আপনারা তো কেউ প্রত্যাশা করেননি। শেয়ার বাজারে বিরাট স্ক্যাম হয়ে গিয়েছে।
- আমরা ২১ জুলাই জনগণকে ধন্যবাদ জানাব।
- লোকসভা আর বিধানসভা ভোটে তফাত আছে। তবু হিসাবের জন্য বলি, ২০১৯ ভোটে বিধানসভাওয়াড়ি হিসাবে ১৬১ সিটে এগিয়ে ছিলাম, বিজেপি ১২১টা সিটে এগিয়েছিল। এবার আমরা ১৯২টা সিটে এগিয়ে আছি আমরা। বিজেপি মাত্র ৯০টায় এগিয়ে। অনেক জায়গায় মিথ্যা কথা বলছে বা খাওয়াচ্ছে। এখনও লজ্জা হয়নি।
- একজন হেরেছেন, তাঁকে জোর করে হারানো হয়েছে। ২-৩ হাজার ভোটে, ইলেকশন কমিশনের দয়ায়। ৩-৪টে সিট আমাদের হারানো হয়েছে। মেদিনীপুর পূর্বের রেজাল্ট দেখুন টোটালটা লুঠ। ডিএম, আইসি বদলেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করেছে সবটা।
- মমতা এদিন বৈঠকে বলেন, আমি তিনদিন না বেরোলে উত্তর কলকাতার আসন বের হতো না। কুণাল, পরেশকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন।