TV9 Explained: নার্সদের নিয়োগে কোথায় ‘গরমিল’? স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কি সত্যিই দুর্নীতি?

TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

May 24, 2022 | 7:05 PM

TV9 Bangla Explained: সোমবার ও মঙ্গলবার পরপর বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন চত্বর। মঙ্গলবার শুরু হয় অবরোধ। ব্যারিকেড সরিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।

TV9 Explained: নার্সদের নিয়োগে কোথায় গরমিল? স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কি সত্যিই দুর্নীতি?

Follow Us

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা এখন প্রায় জলের মত পরিষ্কার। আদালতে যে সব রিপোর্ট সামনে এসেছে, তা থেকে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছেস কী ভাবে তৈরি হয়েছিল ভুয়ো প্যানেল। তোলা হয়েছিল ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নাম। কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও যে একই পরিস্থিতি, তা এত দিন সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। সমস্যাটা সামনে এল গত ২০ মে। নিয়োগের রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের তরফে প্যানেল পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। আর সেই প্যানেল প্রকাশ্যে আসতেই কার্যত বেরিয়ে এল বিক্ষোভের ছাই-চাপা আগুন। চাকরি প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করাই মুস্কিল হয়ে গেল। সোমবারের পর মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে যে ছবি দেখা গেল, তাতেই স্পষ্ট যে এই আঁচ সহজে কমার নয়। কী এমন দেখা গেল প্যানেলে? কী অভিযোগ?

ভুয়ো প্যানেলের কথা শোনা গিয়েছে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্টে। এ ক্ষেত্রে তেমন অভিযোগ সামনে না এলেও প্যানেলেই গুচ্ছ গুচ্ছ খামতি রয়েছে বলে অভিযোগ। চাকরি প্রার্থীদের একটা বড় অংশের দাবি, এমন অনেকের নাম রয়েছে, যাঁদের নাম থাকার কথা নয়। প্রশ্ন হল, কাদের নাম থাকার কথা? আর কিসের ভিত্তিতে নাম তোলা হয়?

অভিযোগগুলি একনজরে

১. চাকরি প্রার্থীদের দাবি, কোন‌ও বছর অসংরক্ষিত (Un-Reserved) প্রার্থীদের মধ্যে সংরক্ষিত প্রার্থীদের (Reserved) গণ্য করা হয় না, যা এ বছর নাকি করা হয়েছে। অন্তত ৫০০ প্রার্থীকে নিয়ে এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, সংরক্ষিত প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা ভাল নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের অসংরক্ষিত তালিকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। চাকরি প্রার্থীরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রার্থীদের সুযোগ কমে যাচ্ছে।

২. জিএন‌এম রেজিস্ট্রেশন ছাড়া অনেকের নাম মেধা তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ। যেহেতু এই আন্দোলন মূলত জিএন‌এম গ্রেড-২ নার্সদের, তাই জিএন‌এম ট্রেনিং থাকা জরুরি। সেই ট্রেনিং-এর ওপর নম্বরও রয়েছে। ট্রেনিং-এর পরই জিএন‌এম রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়। অথচ এ ক্ষেত্রে অভিযোগ, সেই রেজিস্ট্রেশন না থাকা সত্ত্বেও অনেকের নাম উঠেছে জিএন‌এম গ্রেড-২ নার্সদের প্যানেলে। অথচ যাঁদের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে তাঁরা জায়গা পাননি বলেই দাবি।

৩. আরও অভিযোগ, ৩৮ বছর হয়ে গেলে চাকরি পাওয়ার কথা নয়। ৩৮-ই এই চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের উর্ধ্বসীমা। কিন্তু এমন অনেকেই নাকি চাকরি পেয়েছেন, যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে।

৪. কম নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়েছেন অনেকে। এই অভিযোগ যেন এসএসসি-রই প্রতিচ্ছবি। চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, বেশি নম্বর পাওয়ার পরও তাঁদের প্যানেলে নাম নেই।

৫. মাঝে দু বছর নিয়োগ বন্ধ ছিল এই সব পদে। অভিযোগ, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ -তে যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের নাম প্যানেলে নেই। অথচ ২০২১-এর উত্তীর্ণ হয়েছেন, এমন অনেকেই নাকি জায়গা করে নিয়েছেন প্যানেলে। ওই সব চাকরি প্রার্থীদের দাবি, অভিজ্ঞতা বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন চাকরি পাবেন নতুনরা?

কী ভাবে করা হয়েছে নম্বরের বিভাজন?

চাকরি প্রার্থীরা জানিয়েছেন, আগে মেরিট লিস্টের কোনও জায়গা ছিল না। এ বছরই নতুন করে মেরিট লিস্টের চল শুরু হয়েছে। মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বরের ওপর রয়েছে ১০, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বরের ওপর রয়েছে ৩০, জিএন‌এম কোর্সের ওপর রয়েছে ৩০, অভিজ্ঞতার জন্য থাকছে ১৫ নম্বর ও ১৫ নম্বর থাকছে ইন্টারভিউ-র ওপর। শূন্যপদ রয়েছে মোট ৫৬১৪।

কী বলছে নিয়োগকর্তারা?

হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় জানিয়েছেন, নিয়োগে কোন‌ও রকম দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়‌। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যে অভিযোগ উঠেছে তার জন্য ইতিমধ্যে নথি যাচাইয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তাঁর দাবি, রিক্রুটমেন্ট বোর্ড হল নিয়োগ সংস্থা। সকলকে চাকরি দিতে হবে, এই দাবি রূপায়ণের ক্ষমতা রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের হাতে নেই। নিয়োগপ্রার্থীরা বলছেন, আগে আবেদন করলেই চাকরি হত, এখন কেন হচ্ছে না! তাই নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতেই মেধা তালিকার পথে হাঁটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে কে, কত নম্বর পেয়েছেন সেই তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, সংরক্ষিত নিয়োগপ্রার্থীরা ভাল নম্বর পেলে তাঁরা স্বাভাবিক নিয়মেই নাকি অসংরক্ষিত তালিকায় আসবেন। তা না হলে সংরক্ষিত শ্রেণির নিয়োগকারীরা আদালতে যেতে পারেন। আর আরও যে শূন্য পদ রয়েছে, তার জন্য আবার বিজ্ঞপ্তি বেরনোর পথ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে সুদীপ্ত বাবুর দাবি, সরকার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্বচ্ছতা মেনেই যে নিয়োগ হবে, তা নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। তিনি চান, কোথাও অস্বচ্ছতা থাকলে লিখিত ভাবে জানাতে হবে তাঁকে, তবেই দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বিক্ষোভকারীরা বারবার বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে আধিকারিকরা কথা না বলা পর্যন্ত আর প্যানেলের বিষয়টা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ তুলবেন না তাঁরা।

Next Article