কলকাতা: নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেও কেন উপাচার্য এখনও পদে বসে রয়েছেন, সেই নিয়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যের জবাব তলব করেছেন তিনি। আর এরই মধ্যে নতুন করে রাজভবন ও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন আইনি সংঘাতের আকার নিতে চলেছে। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে তেমনই খবর। প্রথমে চিঠি। জবাব না পেয়ে রাজভবনের শো-কজ়ের পর স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ কতদিন তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যপাল তথা আচার্যের পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে রক্ষাকবচ আদায়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন উপাচার্য সুহৃতা পাল।
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে চর্চা তুঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে রাজভবনে চিঠি পাঠিয়েছিল চিকিৎসক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অরাজকতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এরপরই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যেই রাজভবন থেকে তিন দফা চিঠি পৌঁছে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত সপ্তাহে প্রথম চিঠি দেয় রাজভবন। সর্বশেষ চিঠিটি এসেছে রবিবার।
শিক্ষার মতোই উপাচার্যের নিয়োগ ঘিরে রাজ্যপালের পত্রবাণের জবাব আইনি পথেই দিতে চলেছে স্বাস্থ্য ভবন। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুহৃতা পালের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেজিস্ট্রার ইন্দ্রজিৎ গুপ্তকে চিঠি দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই চিঠির সদুত্তর স্বাস্থ্য ভবনের পরামর্শ মেনে দেয়নি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্রের খবর, ইউজিসির নিয়মের কথা বলে যে রিপোর্ট রাজভবন তলব করেছিল তার জন্য দু’সপ্তাহ সময় চান রেজিস্ট্রার।
এদিকে সদুত্তর না পেয়ে রবিবার রাতে সরাসরি উপাচার্যকে চিঠি দেন আচার্য। তিনি এখনও কেন চেয়ারে তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য সুহৃতা পালকে জানাতে বলেন রাজ্যপাল। এরপর সোমবার রাতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন উপাচার্য-রেজিস্ট্রার। সূত্রের খবর, বৈঠকে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমও। বৈঠকে কী রণকৌশল স্থির হল?
সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, উপাচার্য এখনই শো-কজের জবাব দেবেন না। রাজভবনের পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করবেন তিনি। শো-কজ়ের জবাব মামলা দায়েরের পর রাজভবনে পাঠানো হবে। তাতে বলা হতে পারে, প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুহৃতা পালকে উপাচার্য পদে নিযুক্ত করেছিলেন। ফলে অনিয়মের প্রশ্ন নেই। এরপরও রাজভবন সন্তুষ্ট না হলে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে উপাচার্য হিসেবে এক বছর মেয়াদ রয়েছে সুহৃতা পালের। সূত্র মারফত এও জানা যাচ্ছে, সেদিক থেকে রাজভবনের সঙ্গে সরাসরি আইনি সংঘাতের পথে গেলে তিনি কতটা লাভবান হবেন, সেই হিসেব নিকেশও মাথায় রাখছেন উপাচার্য। লাভ-ক্ষতির সেই অঙ্ক কষাকষির উপরেই নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।