কলকাতা: ৪৪ দিনের মাথায় ফলপ্রকাশ। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সদর্পে ঘোষণা করেছে অতিমারি পরবর্তী সময়ে হোম সেন্টারে আয়োজিত পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮.৪। সংখ্যার হিসেবে ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৮৬২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছেন ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৭৫ জন। অর্থাৎ এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে ‘অসফল’ ৮৩ হাজার ৯৮৭ পরীক্ষার্থী। শতাংশের বিচারে অনুত্তীর্ণ সাড়ে ১১ শতাংশেরও বেশি। আর নথিভূক্ত (২৪ হাজার ৭৯৩ জন, রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অবতীর্ণ হননি) তালিকার হিসেব কষলে ‘অকৃতকার্যের’ সংখ্যাটা আরও বেশি।
হোম সেন্টার, পরিচিত পরিবেশের বাড়তি সুবিধা। তারপর সংসদ সভাপতি নিজে বলছেন, ‘প্রশ্নপত্র তুলনামূলক সহজ হয়েছে’। একাধিক বিকল্পের সুবিধাও ছিল। তার উপর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেও পরীক্ষা হয়নি। এরপরও কেন অসফলতার অন্ধকারে থেকে গেল লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী? গ্রাম বাংলায় তো বটেই শহরের নামীদামি স্কুলেও ‘আনসাকসেসফুল’ পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ কলকাতার পাঠভবন স্কুলের কথাই ধরে নিন, মেধা তালিকার প্রথম দশেই নাম রয়েছে, সেই স্কুলেও রয়েছে ‘আনসাকসেসফুল’ পরীক্ষার্থী। আবার শ্যামবাজারের পার্ক ইনস্টিটিউশনের কথাই ধরে নিন, সেখানেও ছবিটা একই রকম। মহেশতলার চট্টাকালিকাপুর সুবিদ আলি গার্লস হাই স্কুলে যেমন ১২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৩৪ জন পাস করতে পেরেছেন। ৮৭ জন ‘অসফল’। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এই ফলাফলে স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কিত। তিনি সংসদের কাছে পুনর্মূল্যায়নের দাবি করেছেন।
সৌরভ (নাম পরিবর্তিত) দে, কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী স্কুলের ছাত্র। সৌরভের বাবা কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই প্রথম হোম সেন্টারে পরীক্ষা দিলেন তিনি। সৌরভের রেজাল্ট ‘আনসাকসেসফুল’। অকৃতকার্য পড়ুয়ার দাবি, তিনি পাস করবেনই। যদিও ছেলের এই রেজাল্টে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত মা। শুধু সৌরভই নন, একই স্কুলের ছাত্রী রূপালী (নাম পরিবর্তিত) দাসও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ। করোনায় বাবা কাজ হারিয়েছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়িতে রয়েছে দাদা ও দিদি। আর্টসের এই ছাত্রীর কথায়, “বন্ধুরা সবাই পাস করেছে। আমি পারিনি। আমার মন খারাপ। বাড়িতে সমস্যা হয়েছিল। টিউশন পড়তে পারিনি। পড়লে হয়ত পারতাম।“ আবার পড়বে? খান্নার বাসিন্দা রূপালী এক রাশ হতাশা নিয়ে জানালেন, “করোনার পর পরিবারের অবস্থা ভাল নেই। মা একাই তো চালাচ্ছে। জানি না আগামী দিনে আর পড়তে পারব কিনা।”
অনুত্তীর্ণদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েও সংসদ সভাপতির আশঙ্কা, অকৃতকার্য হওয়া পড়ুয়াদের নিশ্চয়ই প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। আরও বিশদে তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের ভীতি কাটাতে এবার হোম সেন্টারে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এমনকি প্রশ্নপত্রে মাল্টিপল চয়েস এবং শর্ট টাইপ যে উত্তরগুলো দিতে হত, তা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। পড়ুয়ারা প্র্যাক্টিকালে পাস করলেও থিওরি পেপারে ৩০ শতাংশ নম্বরও পাচ্ছেন না। এটা সত্যিই আশানুরূপ নয়।”
প্রতিকার কী? উত্তরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “প্রথম বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকায় নবম, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের কাউন্সিলিং হয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ফলে পড়ুয়াদের ভীতি তো দূর হয়ই, আগামীদিনেও ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার পথ অনেক সুগম হয়। আমাদের এখানে এখনও পর্যন্ত সার্বিকভাবে এমন কোনও প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। ভবিষ্যতে আদৌ তা শুরু করা যাবে কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্তে এখনই পৌছঁনো সম্ভব নয়।”
কলকাতা: ৪৪ দিনের মাথায় ফলপ্রকাশ। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সদর্পে ঘোষণা করেছে অতিমারি পরবর্তী সময়ে হোম সেন্টারে আয়োজিত পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮.৪। সংখ্যার হিসেবে ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৮৬২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে সাফল্যমণ্ডিত হয়েছেন ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৭৫ জন। অর্থাৎ এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে ‘অসফল’ ৮৩ হাজার ৯৮৭ পরীক্ষার্থী। শতাংশের বিচারে অনুত্তীর্ণ সাড়ে ১১ শতাংশেরও বেশি। আর নথিভূক্ত (২৪ হাজার ৭৯৩ জন, রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অবতীর্ণ হননি) তালিকার হিসেব কষলে ‘অকৃতকার্যের’ সংখ্যাটা আরও বেশি।
হোম সেন্টার, পরিচিত পরিবেশের বাড়তি সুবিধা। তারপর সংসদ সভাপতি নিজে বলছেন, ‘প্রশ্নপত্র তুলনামূলক সহজ হয়েছে’। একাধিক বিকল্পের সুবিধাও ছিল। তার উপর পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসেও পরীক্ষা হয়নি। এরপরও কেন অসফলতার অন্ধকারে থেকে গেল লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী? গ্রাম বাংলায় তো বটেই শহরের নামীদামি স্কুলেও ‘আনসাকসেসফুল’ পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। দক্ষিণ কলকাতার পাঠভবন স্কুলের কথাই ধরে নিন, মেধা তালিকার প্রথম দশেই নাম রয়েছে, সেই স্কুলেও রয়েছে ‘আনসাকসেসফুল’ পরীক্ষার্থী। আবার শ্যামবাজারের পার্ক ইনস্টিটিউশনের কথাই ধরে নিন, সেখানেও ছবিটা একই রকম। মহেশতলার চট্টাকালিকাপুর সুবিদ আলি গার্লস হাই স্কুলে যেমন ১২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৩৪ জন পাস করতে পেরেছেন। ৮৭ জন ‘অসফল’। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এই ফলাফলে স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কিত। তিনি সংসদের কাছে পুনর্মূল্যায়নের দাবি করেছেন।
সৌরভ (নাম পরিবর্তিত) দে, কলকাতার এক ঐতিহ্যবাহী স্কুলের ছাত্র। সৌরভের বাবা কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই প্রথম হোম সেন্টারে পরীক্ষা দিলেন তিনি। সৌরভের রেজাল্ট ‘আনসাকসেসফুল’। অকৃতকার্য পড়ুয়ার দাবি, তিনি পাস করবেনই। যদিও ছেলের এই রেজাল্টে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত মা। শুধু সৌরভই নন, একই স্কুলের ছাত্রী রূপালী (নাম পরিবর্তিত) দাসও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ। করোনায় বাবা কাজ হারিয়েছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়িতে রয়েছে দাদা ও দিদি। আর্টসের এই ছাত্রীর কথায়, “বন্ধুরা সবাই পাস করেছে। আমি পারিনি। আমার মন খারাপ। বাড়িতে সমস্যা হয়েছিল। টিউশন পড়তে পারিনি। পড়লে হয়ত পারতাম।“ আবার পড়বে? খান্নার বাসিন্দা রূপালী এক রাশ হতাশা নিয়ে জানালেন, “করোনার পর পরিবারের অবস্থা ভাল নেই। মা একাই তো চালাচ্ছে। জানি না আগামী দিনে আর পড়তে পারব কিনা।”
অনুত্তীর্ণদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েও সংসদ সভাপতির আশঙ্কা, অকৃতকার্য হওয়া পড়ুয়াদের নিশ্চয়ই প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। আরও বিশদে তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের ভীতি কাটাতে এবার হোম সেন্টারে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এমনকি প্রশ্নপত্রে মাল্টিপল চয়েস এবং শর্ট টাইপ যে উত্তরগুলো দিতে হত, তা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। পড়ুয়ারা প্র্যাক্টিকালে পাস করলেও থিওরি পেপারে ৩০ শতাংশ নম্বরও পাচ্ছেন না। এটা সত্যিই আশানুরূপ নয়।”
প্রতিকার কী? উত্তরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “প্রথম বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকায় নবম, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের কাউন্সিলিং হয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ফলে পড়ুয়াদের ভীতি তো দূর হয়ই, আগামীদিনেও ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার পথ অনেক সুগম হয়। আমাদের এখানে এখনও পর্যন্ত সার্বিকভাবে এমন কোনও প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। ভবিষ্যতে আদৌ তা শুরু করা যাবে কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্তে এখনই পৌছঁনো সম্ভব নয়।”