কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী ও নবান্নের আমলাদের বিরুদ্ধে অধিবেশনকক্ষে বলায় তাঁর বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ (সভার কার্যবিবরণী থেকে মুছে ফেলা) করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (LOP Suvendu Adhikari)। সোমবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে তুমুল হট্টগোল শুরু হয় অধিবেশনকক্ষে। এদিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর বক্তব্য ছিল মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার। প্রথমে বক্তব্য রাখতে ওঠেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দাবি, তাঁর বক্তব্যের জন্য ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল। অথচ ১২ মিনিট বলার পরই নানাভাবে অধিবেশনকক্ষে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে শুরু করেন শাসকদলের বিধায়করা। কখনও উদয়ন গুহ, কখনও আবার ফিরহাদ হাকিম তাঁর কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি বলি, ভাঙড়ে যিনি মারলেন সেই প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূলের নেতা বাইরে ঘুরছেন। আর যিনি মার খেলেন সেই সম্মানীয় বিধায়ক এক মাস হতে চলল জেলে আটকানো। তাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদালতে যা বলেছিল, আমি সেটাই বলি, ‘পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন’। আমি এই শব্দটুকু বলায় মুখ্যমন্ত্রীর রাগ হয়। উদয়ন গুহ আমাকে বাধা দিচ্ছিলেন। তাঁকে স্পিকার বসিয়ে দেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রী গুঁতো মেরে ফিরহাদ হাকিমকে বলেন বাধা দাও। ফিরহাদ হাকিম বাধা দেন। তাকে অরূপ বিশ্বাস টেনে বসিয়ে দেন।”
শুভেন্দু বলেন, অধ্যক্ষ তৃণমূল বিধায়কদের বার্তা দেন, তাঁদের জবাব দেওয়ার সুযোগ আসলে যেন পাল্টা বলেন। শুভেন্দুর দাবি, এরপর তিনি রাজ্যের অর্থনৈতিক ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সরব হন। বলেন, “আমি অর্থনৈতিক দুর্নীতির কথা বলতে শুরু করেছিলাম, ১২ মিনিটের মাথায় ওরা অসম্ভব পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়। তারমধ্যেই আমি বলি, আপনি জেলায় জেলায় মহকুমা মহকুমায় সুবিধাপ্রদান সভা করবেন, রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সভা করবেন এটা নিয়ে আমাদের কিছু আপত্তি নেই। সব রাজ্যে হয়। কিন্তু মিড ডে মিলের টাকা যা পিএম পোষণ প্রকল্পে আসছে তা থেকে কেন এসব হবে। রামপুরহাটে বগটুইয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা মিড ডে মিলের টাকা থেকে গেছে। এটা দিতে পারেন না। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।”
শুভেন্দু আরও বলেন, তিনি আইএএস-আইপিএসদের বাড়তি ভাতা নিয়ে সরব হন। তখন মুখ্যমন্ত্রী এর বিরোধিতা করেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, ” যখন আমলাদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে বলি তখন আমাকে আটকানো হয়। যখন নিজের বিধায়ক মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত বুঝতে পারছেন না, তখন মুখ্যমন্ত্রীই অধ্যক্ষকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও আইএস আইপিএস সম্পর্কে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য রেকর্ড থেকে বাতিল করতে হবে। এক্সপাঞ্জ করতে হবে। তৎক্ষণাৎ রুলসবুক না দেখে, না জেনে আমার সঙ্গে আলোচনা না করে অধ্যক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব কনভে করে দেন সচিবালয়কে। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও আইএএস আইপিএস সংক্রান্ত কোনও কথা বিরোধী দলনেতার রেকর্ডে যাবে না।” এরপরই তিনি এর প্রতিবাদ করেন। তাতেই অধিবেশন কক্ষে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা।