কলকাতা: বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শাসকদলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। শুক্রবার বিধানসভায় ডেবরায় বিধায়ক প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান, তফসিলি জাতি উপজাতি মহিলাদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডারের অর্থ ১০০০ টাকা দেওয়া হবে কি না? উত্তরে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, “ধর্মীয়ভাবে এটা করা হয় না। এটা প্রান্তিক মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করেছেন।” তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তার সংখ্যা ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৩ জন।
উত্তর পর্ব চলাকালীনই প্রতীচি ট্রাস্টের একটি রিপোর্ট তুলে ধরে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু মহিলাদের অবস্থা আর্থিকভাবে ভাল না। আমরা যখন পঞ্চায়েতের ভোট প্রচারে গিয়েছিলাম, তখন ওই সম্প্রদায়ের মহিলাদের একাংশ বলেছিলেন, তাঁরাও তো ভোট দেন, কিন্তু ৫০০ টাকা করে কেন পাচ্ছেন? যেখানে তফসিলি মহিলারা ১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন।’’
মন্ত্রী শশী পাঁজা তখন উত্তর দেন, “উনি অন্য কোনও দলের থেকে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা শুনে থাকতে পারেন। এটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুসারে সকলকে দেওয়া হচ্ছে।”
বিধায়ক ফের বলেন, “আমি বুঝেছি এটা ধর্মীয়ভাবে হয় না। অন্তত ওবিসি সংখ্যালঘু মহিলাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হোক।” হুমায়ুন কবীর গোটা প্রশ্নোত্তর পর্ব ইংরাজিতে করেন। তা নিয়ে বিধায়কের উদ্দেশে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনি অমর্ত্য সেনের রিপোর্টের কথা বলছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত রিপোর্টটি আপনি টেবিলে জমা দেবেন।”
এরপর স্পিকারের বক্তব্য, “লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে আপনি যখন প্রশ্ন করছেন, তখন বাংলাতে করুন।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা, লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে এহেন প্রশ্ন করে রাজ্য সরকারকে কিছু বিব্রত করেছেন দলেরই বিধায়ক।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বাজেট ঘোষণায় তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য ঢালাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪০ হাজারের বেশি তফসিলি মানুষকে ১ হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়া হয়। মমতা ঘোষণা করেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পেও মাসে ১০০০ টাকা করে পাবেন তফসিলি পরিবারের মহিলারা।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিধায়ককে যখন এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বারংবার বিভিন্ন এনজিও-র রিপোর্ট তুলে ধরেন। কিন্তু একজন শাসকদলের বিধায়ক হিসাবে তিনি নিজে কী মনে করেন, সত্যিই কি বাংলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ? প্রশ্নের একেবারের শেষ হুমায়ুন কবির উত্তর দেন, এ রাজ্যের বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্ট বলছে, মাত্র এক শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলা চাকরি করেন, ৩০-৩৫ শতাংশ মহিলা কৃষিকাজ করেন, বাকিরা কেউ কোনও কাজ করেন না। সেই কারণেই তিনি এই বিষয়টির সঙ্গে সহমত। তাঁর প্রশ্ন একই কারণে যদি তফশিলি মহিলারা ১০০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন, তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলারা কেন পাবেন না? জবাবে অবশ্য শশী পাঁজা স্পষ্টতই সরকারের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু শাসক বিধায়কের এই প্রশ্নে যে দল অস্বস্তিতে পড়ে, তা স্পষ্টত দেখা যায়। কারণ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হতেই দেখা যায়, বিধানসভার ভিতরেই হুমায়ুন কবিরকে ঘিরে ধরে শাসকদলের অন্যান্য বিধায়ক নির্মল ঘোষ, তাপস রায়, অরূপ বিশ্বাসরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যালঘুদের ভোট মমতা সরকারের বড় ভরসার জায়গা। সেখানে এ ধরনের প্রশ্ন সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। সংখ্যালঘু বিধায়কের বিরুদ্ধে দল কোনও পদক্ষেপ করে কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।