কলকাতা ও নয়াদিল্লি : দিল্লি সফরে গিয়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনের এক অনুষ্ঠানেও থাকবেন মমতা। আগামিকাল (রবিবার) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের বৈঠকেও থাকার কথা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও, বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোকে বসতে দেখা না যাওয়া প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন সুকান্ত মজুমদার।
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসকে দিল্লিতে আদৌ কেউ বিশ্বাস করে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন… প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান বদল করেছেন, তাতে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির রাজনীতিতে তিনি অপাংঙ্কতেয় থাকবেন বলেই আমার মনে হয়। কারণ, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে। তাঁকে কেউ বিশ্বাস করেন না দিল্লিতে। যতদূর আমি দিল্লির রাজনীতি দেখেছি বা বুঝেছি… মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করার থেকে সাপকে বিশ্বাস করা ভাল।”
তবে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন তোলার পরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বললেন, “উনি একজন ট্রেনি সভাপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে উনি কথা বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাত বারের সাংসদ, চার বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দুই বার রেলমন্ত্রী, তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি দিল্লি সফরের আলাদা আলাদা প্রেক্ষিত থাকে। সুকান্ত মজুমদারকে তো দলের অর্ধেক লোক মানেন না। সমস্যা হল, উনি যত তৃণমূল এবং তৃণমূল নেত্রীকে নিয়ে চিন্তিত, ওনাকে ফেলে শুভেন্দু চলে যান অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতে। উনি বোঝেন উনি অপাংক্তেয়। তাই আলাদা গিয়ে দেখাতে হয়, আমিও আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিসংবাদিত বিরোধী নেত্রী। সুকান্ত মজুমদার সভাপতি হওয়ার পর থেকে যে ধারাবাহিকভাবে একটি দল ডুবছে… ও নিজে দেখেছে, নিজের রেজাল্ট কী? তিনি বরং আগে নিজের জায়গা তৈরি করুন। এটা বড়দের ব্যাপার। সেই বিষয়ে কথা বলার যোগ্যতা তাঁর এখনও তৈরি হয়নি।”
বিষয়টি নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সারা ভারতে উনি একটি মনোভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, যা কৃত্রিম। পশ্চিমবঙ্গের বাস্তবতা বলছে, তা ঠিক নয়। এমন মনোভাব ছিল যেন তিনি বিরোধীদের থেকেও বড় বিরোধী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সবাই বুঝে গিয়েছে তারা প্রতারিত হচ্ছে। উনার বিশ্বাসযোগ্যতার তোলা আছে নরেন্দ্র মোদীর প্রতির। নরেন্দ্র মোদীর ভরসা আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। যত দিন যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এবং ভিনরাজ্যের রাজনৈতিক নেতারা বুঝতে পারছেন সব থেকে অবিশ্বাসযোগ্য এক শক্তি। এটি সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা।”
খোঁচা দিতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনি জানিয়েছেন, “কে কী বলছেন জানি না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসেছিলেন মোদীকে ম্যানেজ করার জন্য। এ কথা আমি আগেও বলেছি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য কলকাতা থেকে দই, মিষ্টি, ছানা, কাপড়, ফুল, ফল নিয়ে এসেছেন শুধুমাত্র ইডির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। মমতা ও মোদীর সমঝোতা এখন ক্রমেই প্রত্যক্ষ হচ্ছে।”