কলকাতা: গত কয়েকমাসে এ রাজ্যে যা ঘটেছে (Cash Recover), তাতে অনেকেই বলছেন, বাংলার আকাশে টাকা ওড়ে। দু’শো, পাঁচশো টাকা নয়, কোটি কোটির খেলা চলে। তদন্তকারীরা যাচ্ছেন, বাক্স ভরে টাকা নিয়ে বেরোচ্ছেন। এ যেন আলিবাবার গল্প। ‘চিচিং ফাঁক’ বলে তদন্তকারীরা ঢুকছেন, বেরোচ্ছেন যখন টাকা গুনতে গুনতে গলদঘর্ম দশা। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট কিংবা জাকির হোসেনের বিড়ি কারখানা, নগদের ছড়াছড়ি। কোন পথে এ টাকা এসেছে, তার তদন্ত তো চলছেই। গ্রেফতারও হয়েছেন কোনও কোনও মামলায়। তবে তদন্ত চলুক তদন্তের তালে। এরই মাঝে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কার ভাণ্ডার থেকে কত রতনের খোঁজ মিলল গত এক বছরে।
২২ জুলাই, ২০২২। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের হরিদেবপুরের ডায়মন্ড সিটি আবাসনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সবই ৫০০ আর ২ হাজার টাকার বান্ডিল। কারও ঘরে যে এত টাকা থাকতে পারে, দেখা তো দূর কী বাত, ভাবতেও পারেননি বঙ্গবাসী। তদন্তকারীরা বলেন, এই অর্পিতা নাকি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। এরপর আবার ২৭ জুলাই অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। সেখানেও আরেক কাণ্ড। যকের ধন সাজানো আলমারি, বাথরুমের দেওয়াল, বিছানার নীচে। সংবাদমাধ্যম থেকে চোখই সরছে না লোকজনের। টাকা গোনার মেশিন আনতে আনতে ক্লান্ত হয়ে যান তদন্তকারীরা। পরদিন ভোর পর্যন্ত টাকাই গুনে গিয়েছিলেন। চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়।
গত বছরই ৩০ জুলাই। হাওড়ার পাঁচলায় রানিহাটি মোড় থেকে ৪৯ লক্ষের বেশি নগদ টাকা উদ্ধার হয়। সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁদের গাড়ি থেকেই এই টাকা উদ্ধার করা হয়। কংগ্রেসের জামতারার বিধায়ক ইরফান আনসারি, রাঁচি জেলার খিজরির বিধায়ক রাজেশ কাশ্যপ, সিমদেগা জেলার কোলেবিরার বিধায়ক নমন বিক্সাল কোঙ্গারিকে কংগ্রেস সাসপেন্ডও করে। এরপর জল গড়ায় হাইকোর্ট অবধি। আপাতত তিন বিধায়ক জামিনে মুক্ত।
গত ২ সেপ্টেম্বর হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানির ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় সিবিআই। চিটফান্ডকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় রাজুকে। এরপর তাঁর রাজারহাটের ফ্ল্যাটে যান তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর রাজারহাটের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। এই মামলায় এখনও অবধি তিনটি চার্জশিট জমা পড়েছে আসানসোল আদালতে। সূত্রের খবর, এই চার্জশিটে রাজু সাহানি ছাড়াও নাম রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী দুর্গাপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় সিং ও রেখা চট্টোপাধ্যায়ের।
গত বছরই ৪ সেপ্টেম্বর মালদহের গাজোলের এক মাছ ব্যবসায়ী জয়প্রকাশ সাহার বাড়িতে হানা দেয় সিআইডি। সেখান থেকে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে নিয়ে যায় রাজ্যের তদন্তকারীরা। জয়প্রকাশদের শোওয়ার ঘরে খাটের তলায় একটি ব্যাগ রাখা ছিল। সেই ব্যাগ থেকে এই বিপুল টাকা উদ্ধার হয় সেদিন। কী কারণে একজন মাছ ব্যবসায়ীর বাড়িতে এত নগদ টাকা পাওয়া গেল, তার সদুত্তর এখনও খুঁজছেন
গত ১০ সেপ্টেম্বর গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল রোডের বাসিন্দা আমির খানের বাড়ি থেকে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ইডি। এ ছাড়া ১৩ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার ক্রিপ্টো মুদ্রাও বাজেয়াপ্ত করে ইডি। তদন্তে ইডি জানতে পারে, ‘ই-নাগেটস’ নামে একটি গেমিং অ্যাপ তৈরি করে আমির খান কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বিড়ি কারখানা থেকে ৮ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করে আয়কর দফতর। চারটি বিড়ি কারখানা থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা উদ্ধার হয় বলে সূত্রের খবর। এই টাকা উদ্ধার হওয়ার পর জাকির হোসেন অবশ্য বলেন, এই টাকা বেআইনি নয়। খাতায় কলমে সব ঠিকই আছে। তবে, সূত্রের খবর, টাকার উৎস কী , সেই সংক্রান্ত নথি আয়কর দফতরের আধিকারিকদের সামনে পেশ করা সম্ভব হয়নি বলেই টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে তারা।