কলকাতা: এগিয়ে আসছে লোকসভা ভোট। সময় মতো ভোট হলে, হাতে আর একবছরও সময় নেই। আর তার আগে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের জন্য ‘কল্পতরু’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম- মোয়াজ্জেমদের সমাবেশে একগুচ্ছ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। সংখ্যালঘুদের জন্য মমতার সরকার কী কী করেছে বিগত বছরগুলিতে, তাও এদিন বার বার বুঝিয়ে দিলেন মমতা। সংখ্যালঘুদের আঁতে ঘা লাগলে, মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার যে বার বার তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, তাও মনে করিয়ে দেন তিনি। বার্তা দিলেন, তিনি সংখ্যালঘুদের ঘরের মেয়ের মতোই।
এদিন ইমাম-মোয়াজ্জেম সমাবেশ শুরুর আগেই সুর চড়িয়েছেন আইএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা আব্বাস সিদ্দিকী। দাবি তুলেছিলেন, ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়ানোর জন্য। বিজেপি শাসিত গুজরাট-সহ অন্য বিভিন্ন রাজ্যের তুলনায় বাংলায় যে এই ভাতা অনেকটাই কম, তাও উল্লেখ করেছেন আব্বাস। ইমামদের ভাতা ১০ হাজার ও মোয়াজ্জেমদের ভাতা ৮ হাজার টাকা করার দাবি তুলেছেন আব্বাস। এদিন সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়ানোর বার্তা দিলেন। আব্বাসদের দাবিমতো অবশ্য বাড়েনি টাকা। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে ভাতা। ইমামরা আগে ভাতা পেতেন ২,৫০০ টাকা করে। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ৩,০০০ টাকা করে। অন্যদিকে মোয়াজ্জেমরা এতদিন পেয়ে আসছিলেন ১,০০০ টাকা করে। তাঁদের ভাতা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১,৫০০ টাকা। সোমবার নেতাজি ইনডোরের সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা করলেন মমতা।
শুধু তাই নয়, ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য ঋণের বন্দোবস্তের কথাও এদিন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার অন্যান্য জনমুখী ঋণ প্রকল্পের মতো এক্ষেত্রেও ঋণের গ্যারান্টার হবে রাজ্য সরকারই। এই ঋণের মাধ্যমে ইমাম-মোয়াজ্জেমরা যে আর্থিকভাবে অনেকটা উপকৃত হবেন, তাও উল্লেখ করেন মমতা।
এর পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারেও নিজের ভাবনার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দিনে রাজ্যে আরও ৭০০টি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ভাবনা রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই সেই সমীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার বক্তব্য, মাদ্রাসাগুলি কী পড়ানো হবে, তাতে হস্তক্ষেপ করবে না রাজ্য। তবে এগুলি রেজিস্টার্ড হলে সেখানকার পড়ুয়ারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাবে।
এদিনের সমাবেশে একের পর এক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন মমতা। রাজ্য সরকার যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সবসময় সংখ্যালঘুদের পাশে রয়েছে, তাও বোঝানোর চেষ্টা করেন। আর কয়েক মাস পর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মমতার এই ঘোষণা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণার পর রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইমাম-মোয়াজ্জেম-পুরোহিতদের কথায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভোট দেন না। উনি সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন। সংখ্যালঘুদেরও বোঝা উচিত, তাঁরা কতটা প্রতারিত হয়েছেন গত ১২ বছরে। কতদিন তাঁরা আর ভোটব্যাঙ্ক হয়ে বেঁচে থাকবেন?’