কলকাতা: দিল্লির রাজনীতিতে যখন ইন্ডিয়া জোটে এক ছাতার তলায় কংগ্রেস ও তৃণমূল, তখন বাংলায় তৃণমূলের থেকে বহু ক্রোশ দূরে প্রদেশ কংগ্রেস। তৃণমূল নয়, বরং বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছে কংগ্রেস। তবে ফল খুব একটা আশানুরূপ হয়নি। বহরমপুর হাতছাড়া হয়েছে অধীর চৌধুরীর। এখন লোকসভায় বাংলা থেকে কংগ্রেসের সবেধন নীলমণি মালদার ইশা খান চৌধুরী। এই একটি আসনেই টিমটিম করে জ্বলছে প্রদেশ কংগ্রেস। এখন থেকে কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস? আবার কি পুনরুজ্জীবন সম্ভব? টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইশা খান চৌধুরী অবশ্য যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী এ ব্যাপারে। শুধু মালদাতেই নয়, মুর্শিদাবাদে ও উত্তরবঙ্গ জুড়ে কংগ্রেসের সংগঠন যে যথেষ্ট ভাল আছে, সেটাও জানালেন তিনি।
লোকসভা ভোটে আসন আগের থেকেও কমেছে। দুই থেকে কমে এক হয়েছে। তবে এটাকে কংগ্রেসের ‘মাইনাস’ পয়েন্ট হিসেবে দেখতে নারাজ মালদার কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর কথায়, “যদি পরিসংখ্যান দেখেন, তাহলে কংগ্রেসের ভোট শতাংশ বেড়েছে বাংলায়। জোটের ভোট শতাংশও বেড়েছে। কংগ্রেস মাইনাস হয়ে গিয়েছে, এটা আমি মানি না। কংগ্রেসের ভোট আছে, আগামী দিনে আরও বাড়াতে হবে।” কীভাবে সংগঠনকে আরও মজবুত করা যায়, শুক্রবার দলীয় বৈঠকে মূলত এই নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন ইশা খান চৌধুরী।
বঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেস ‘শূন্য’। উপনির্বাচনে সাগরদিঘি থেকে বায়রন জিতলেও, তিনি এখন তৃণমূলে। তবে এবারের লোকসভা ভোটে বেশ কিছু বিধানসভা আসন থেকে লিড নিয়েছে কংগ্রেস। আগামী বিধানসভা ভোটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে, সে ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী ইশা খান চৌধুরী। কিন্তু কোন সমীকরণে এই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন তিনি? সে ব্যাপারেও টিভি নাইন বাংলাকে নিজের বিশ্লেষণ শোনালেন মালদার সাংসদ। তাঁর কথায়, “২০২১ সালে আমরা একটাও বিধায়ক পাইনি। তার কারণ ছিল। এনআরসির কারণে গোটা বাংলায় মেরুকরণ হয়েছিল। একাংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল। আর সংখ্যালঘুরা অনেকে ভয় পেয়েছিলেন, তাই তারা বিজেপির বিরুদ্ধে একটি জায়গাতেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এবার গোটা দেশেই কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কেন্দ্রে এখন আর বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, জোট সরকার রয়েছে। এখন আর বিজেপি যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে না। যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিতেন, তাঁরা মনে করতেন মোদী অপ্রতিরোধ্য। সেই ফ্যাক্টরটিও আর নেই। সেটার প্রভাব এবার দেখা যাবে রাজ্য বিধানসভার ভোটে।”
বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়নি। যদি তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে লড়াইয়ে নামত কংগ্রেস, তাহলে কি ফল এর থেকে ভাল হত? এই নিয়েও ভোটের রেজাল্টের পর বিস্তর চর্চা চলেছে বঙ্গ রাজনীতিতে। সেটা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল ইশা খান চৌধুরীকে। এই নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও মালদার কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “আমরাও চাই বিজেপিকে হারাতে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় পুলিশ-প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। ভোট অবাধ হয় না। সেই কারণে অনেক কর্মীর আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে। কিন্তু, একইসঙ্গে আমাদের বুঝতে হবে, লোকসভা ভোট হল গোটা দেশব্যাপী নির্বাচন। হাইকমান্ড সর্বভারতীয় স্তরে লড়াই করছে। সেটা আমাদেরও বুঝতে হবে। হাইকমান্ড গোটা দেশ দেখছে, আমরা বাংলাকে দেখছি। তাই দু’টো ভিউ পয়েন্ট রয়েছে। আমরা তৃণমূলের সঙ্গে জোটে একটু কম স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু দেশকে বাঁচানোর জন্য যা করার করতে হবে।”