কলকাতা: রাজনীতির মানুষ হোন, সেলেব্রিটি কিংবা আম-আদমি, গ্রহরত্ন-আংটি-পাথরে (Gemstone) ভরসা রাখেন কমবেশি সকলেই। অনেকেই বলেন, সেই রত্ন ধারণ করে তাঁদের জীবন বদলে গিয়েছে। কারও জীবনে ঘোর বিপদ কাটানো, কারও আবার কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, সব দায়িত্ব এই গ্রহরত্নের উপরই। আংটি পরে উপকার পেয়েছেন এমন কথা সংবাদমাধ্যমে অনেকে স্বীকারও করেন। গ্রহরত্নের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সেলেব এই রত্ন ধারণ করে উপকার পেয়ে খুশি। তবে সম্প্রতি এই রত্ন পরেই বিপাকে পড়তে হয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলে ইডি। কীভাবে জেলে থেকে আঙুলজুড়ে দামি আংটি, রত্ন পরে থাকতে পারেন, আদালতে জানতে চায় ইডি। ইডির অবশ্য নিশানায় পার্থর ‘প্রভাবশালী’ তকমা। তবে ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, পাথরে কি কর্মফলও বদলে যায়?
শহরের এক নামজাদা গয়নার দোকানের এক গ্রহরত্ন বিক্রেতার কথায়, “আমাদের এখানে রাজনীতিক, সেলেব্রিটিরা সকলেই আসেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, জেম স্টোন ধারণ করে জীবনে এগিয়ে যাবেন। আমরা সেইমতোই জেম স্টোন দিই। পরে আমরা ফিডব্যাক নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করি। অনেকে নিজেরাও এসে জানান। আমরা পজিটিভ ফিডব্যাকই পাই।” অর্থাৎ পাথর ধারণ করে জীবনে বদল আসে, এমনই দাবি ওই গয়নার দোকানের প্রতিনিধির।
তিনিই জানালেন, রাজনীতিক বা সেলেব, পাথরের উপরও যেমন জোর দেন, একইভাবে জোর দেন ডিজাইনের উপরও। তাঁর কথায়, “এখন মার্কেটে জিওমেট্রিক শেপ, ফ্লাওয়ার ডিজাইন বা ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনেরও যথেষ্ট চাহিদা। বিভিন্ন রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে এই ধরনের আংটি।”
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আংটি ভারতীয় সভ্যতায় একটা বিশেষ গুরুত্বের। এটাকে ইংরাজির রিং সেরেমনির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আংটি দিয়ে মানুষকে চেনার ঐতিহ্য আমাদের সভ্যতায় দীর্ঘদিনের। শকুন্তলার আংটি যা মাছের পেটে পাওয়া গেল, দুষ্ম্যন্ত দীর্ঘ বিস্মৃতির পর তাকে চিনতে পারল, এই চিনতে পারা এক সময় সিনেমার একটা মূল উপজীব্য ছিল।”
আর আংটি নিয়ে সিনেমার কথা উঠলে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘হিরের আংটি’ বা সন্দীপ রায়ে ‘বাদশাহি আংটি’র কথা বলতেই হয়, বলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “হিরের আংটি যদিও বাচ্চাদের ছবি। সেখানে অন্যরকম একটা মানে আছে। বাদশাহি আংটিতে আংটির আভিজাত্য ও বিশেষ সঙ্কেত চিহ্নের প্রতীক।”
সেলুলয়েডে এই আংটির ব্যবহার কখনও ‘প্রপস’ হিসাবে, কখনও ‘স্মারক’ হিসাবে, কখনও আবার বিশেষ সঙ্কেত বয়ে এনেছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে বেহালার বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আংটি’ও বিশেষ সঙ্কেতবাহী। তাই বোধহয় আদালতে বুধবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “একজন অভিযুক্ত কি জেলে কোনও অলঙ্কার পরে থাকতে পারেন? সব তো খুলে রাখতে হয়। পার্থ এতটাই পাওয়ারফুল যে তাঁকে জেলেও আংটি পরতে দেওয়া হচ্ছে।”