মহোৎসবে মাতোয়ারা গোটা রাজ্য। তবে দেখতে দেখতে কেটে গেল দিন, এসে গেল নবমী। নবমীর সকাল থেকেই পুজোপাঠ, অঞ্জলি, আরাধনা। বনেদি বাড়ি থেকে বারোয়ারি পুজোয় চরম ব্যস্ততা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গলি থেকে রাজপথে মানুষের ঢল।
এবার কলকাতায় যে কটি পুজো সবথেকে বেশি ভিড় টানছে, তার মধ্যে অন্যতম সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। লালকেল্লার আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সন্ধে নামলেই এই মণ্ডপে বিশেষ আকর্ষণ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। মণ্ডপের দেওয়ালে ফুটে ওঠে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্ত। সঙ্গে দেশাত্মবোধক গান। আর তা দেখতেই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে।
নবমীর বিকেলে শহরে উপচে পড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। শ্রীভূমিতে ভ্যাটিকান সিটি একঝলক দেখে নেওয়ার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ এসে ভিড় করেছেন। যাঁরা এতদিন শ্রীভূমি দেখার সুযোগ পাননি, তাঁরা শেষ মুহূর্তে সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে একেবারেই চান না। তাই পুজোর আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করে নিতে শ্রীভূমির মণ্ডপের সামনে উপচে পড়েছে ভিড়।
গোটা পুজোর মরশুমে বার বার বিঘ্ন ঘটিয়েছে বৃষ্টি। পুজোর লাস্ট ল্যাপেও পিছু ছাড়ছে না বৃষ্টি-অসুর। নবমীতেও বৃষ্টিতে মাটি পুজোর আনন্দ। জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় মুশলধারে বৃষ্টি নামে। নবমীর দুপুরেও আচমকাই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি নামল ধুপগুড়িতে। টানা বৃষ্টির জেরে জল জমে গিয়েছে ধুপগুড়ি থেকে ফালাকাটা গামী জাতীয় সড়কের উপরেও। ডুয়ার্সের আকাশে এখনও কালো মেঘ। মুখ ভার করে রয়েছে আকাশ। ফলে চিন্তিত পুজো উদ্যোক্তা থেকে ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে জলের ওপরে দোকান করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
কেষ্টপুর রবীন্দ্রপল্লি নাগরিক কমিটির ২৪ তম পুজো প্যান্ডেলের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। মণ্ডপের একাংশ পুড়ে ছাই। স্থানীয় এবং পুজো উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, শর্ট সার্কিটের জেরে আগুন লাগেনি। বরং এর পেছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে। তদন্তে নেমেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। ইলেকট্রিশিয়ানের দাবি, শর্টসার্কিট হলে এমসিবি অফ হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথমে চেয়ার থেকে আগুন লাগে।
প্রাচীন রীতি মেনে বর্ধমানের সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হল কুমারী পুজো। দুর্গানবমীর দিনে ন’ কুমারীকে দেবী দুর্গার বিভিন্ন নামে পুজিতা করা হল। মন্দিরের পুরোহিতদের মতে দেবীকে জ্যান্তরূপে পুজিতা করার উদ্দেশ্যেই এখানে দীর্ঘদিন ধরে নবকুমারী পুজো হয়ে আসছে। সেই পুরোনো রীতি মেনে আজও এখানে কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হল।
বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো। এই পুজোর পরতে পরতে সাবেকিয়ানা। নবমীর সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পুজোপাঠ, অঞ্জলি। নিষ্ঠার সঙ্গে রীতি মেনে চলছে পুজো।
জেলার বড় পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বালুরঘাট কচিকলা অ্যাকাডেমির পুজো৷ এবারের পুজোর থিম কাল্পনিক। পুজো মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হয়েছে ডাকের সাজে প্রতিমা। এবারে কচিকলা অ্যাকাডেমির পুজো ৫৫ তম বর্ষে পদার্পণ করল।
আলিপুরদুয়ারে দুটি প্রাচীন পুজো।আলিপুরদুয়ার দুর্গাবাড়ি ও নিউটাউন দুর্গাবাড়ি। এই দুই দুর্গাবাড়ির পূজো দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। অন্য কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের পুজো দেখার ফাঁকে এই দুটি পুজোয় মানুষ ভিড় করেন। তুলনাহীন প্রতিমা, যা দেখতে আসতেই হয় দর্শনার্থীদের।
ঢাক বাজালেন জননেতা। তাল ঠুকলেন হোম সুপার। আনন্দ করলেন কোরক হোমের কচিকাঁচারা। পূজোয় এবার জোর আনন্দে মাতলো জলপাইগুড়ি কোরক হোমের আবাসিক শিশুরা। পুজো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সেই আনন্দে সামিল হলেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ। অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে শিশুদের আনন্দ দিলেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ৪৫ তম বর্ষে ডায়মন্ড অ্যাথলেটিক ক্লাবের এই বছরের থিম পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা। রেডিয়শনের ফলে বহু পাখি লুপ্তপ্রায় হতে শুরু করেছে। সেই সব পাখিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পূজা কমিটি সদস্যরা।
দূর্গাপুজো উপলক্ষে আতসবাজির অনুষ্ঠান, বৃষ্টি উপেক্ষা করে চন্দ্রকোণার বালা গ্রামে হাজারও মানুষের জমায়েত। বালা সার্বজনীন দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও অষ্টমীর গভীর রাতে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান আতসবাজির। শুধু বালা গ্রাম নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজনও এই আতশবাজির অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমান।