কলকাতা: বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ উঠল মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে। অভিযোগ, ‘এক মাসের মধ্যে সিধে করে দেব’, ‘এক মাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেব’, পার্থকে হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবারের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল শুরু হয় বিধানসভায়। শুভেন্দুর এই বক্তব্যের পরই বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে পার্থ ভৌমিক অভিযোগ জানান। অধ্যক্ষও বলেন, ‘শুভেন্দুবাবু আপনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না।’ শুভেন্দুর এই বক্তব্য রেকর্ডে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ঘটনার সূত্রপাত শুভেন্দু অধিকারীর একটি বক্তব্যকে সামনে রেখে। এদিন পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন বক্তার তালিকায়। তাঁর বক্তব্যের একেবারে শেষ লগ্নে এসে বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যাওয়া দুই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসদের দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘এনারা কোন দলে আছেন? এনারা স্পিকারের সামনে বলবেন বিজেপিতে আছেন। তাহলে ওনাদের এদিকে থাকতে বলুন।’ এরপর শুভেন্দু নিজের আসনে বসে পড়েন। সেই সময় নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক পাল্টা বলেন, ‘শিশিরবাবু কোন দলে আছেন?’
অভিযোগ, এরপরই শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উদ্দেশে বলেন, এক মাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবেন। এরপরই পার্থ ভৌমিক উঠে দাঁড়িয়ে স্পিকারকে বলেন, ‘স্যর উনি বলছেন এক মাসের মধ্যে জেলে ঢোকাবেন।’ এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরোনোর পর শুভেন্দু এখনও এ নিয়ে কিছু বলেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, জেল শব্দের ব্যবহার শুভেন্দু করেননি। ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের যে রিপোর্ট রয়েছে, সে ইঙ্গিত করেছেন।
তবে পার্থ ভৌমিক বারবার দাবি করেন তাঁকে এক মাসের মধ্যে জেলে ঢোকানোর কথাই বলা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনা, তাও আবার বিধানসভায়, স্বভাবতই চাপানউতর শুরু হয়েছে। এদিন স্পিকারের কাছে পার্থ অভিযোগ জানানোর পর স্পিকার বলেন, ‘কে কাকে জেলে ঢোকাবে? এভাবে হয় না কি? এটা রেকর্ডে রাখছি।’
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, “সম্মানীয় বিরোধী দলনেতা নিজের বক্তব্যের মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস, কৃষ্ণ কল্যাণীর উদ্দেশে বলেন এরা বিজেপির বিধায়ক। এদের স্পিকারের সামনে অন্য কিছু বলার ক্ষমতা নেই। আমি তখন বলি, আপনি বলতে পারবেন শিশিরবাবু কোন দলের? উনি তখন বললেন এক মাসের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেব।” একইসঙ্গে পার্থ ভৌমিক বলেন, “সিএম যে চিঠি দিয়েছিলেন, সিবিআই ইডিকে পরিচালনা করছে বিজেপি, সেটাই প্রমাণিত বিরোধী দলনেতার কথায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমাদের সব বিধায়ককেও যদি জেলে ঢুকিয়ে দেন, তাতেও ওই শাড়ি পরা মহিলা একাই যথেষ্ট। উনিই সামলে নিতে পারবেন। তবে আমি নিজের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। দেশে আইন আছে। আমায় জেলে ঢোকাতে গেলে কোনও দোষ থাকতে হবে। আমায় যারা চেনেন, তারা জানেন আমি অসংসদীয় কথা বলি না। আমি শিশিরবাবুর নাম করেই বলেছি। সম্মান দিয়েছি। স্পিকারের কাছে আমি বলেছি, বাইরে হলে কোর্টে যেতাম। স্পিকারের কাছে আবেদন জানলাম। বাইরে হলে কোর্টে বলব।”
এদিকে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “এজেন্সিকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে। বঙ্গ বিজেপি বিশেষ করে শুভেন্দু যেভাবে কথা বলছেন তাতেই বোঝাই যাচ্ছে তাঁরা এজেন্সি চালাচ্ছে। তা না হলে রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রীকে এভাবে হাউসের ভিতর বলতে পারে না। এটা বেআইনি। দলের তরফেও আলোচনা হবে।”
এরপর ফের অধিবেশন কক্ষে পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘আমি ১১ বছর বিধানসভায় আছি। সম্মানীয় বিরোধী দলনেতা আমাকে এক মাসের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেবেন বলছেন। আমি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। বিচার চাইছি।’ পাল্টা বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক এর প্রতিবাদ করে বলেন, সবটা ঠিক নয়। এরপরই স্পিকার বলেন, ‘এত বিতর্কের বিষয় নয়। আমি নিজেই শুনেছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। সদনে একজন সদস্য আরেকজন সদস্যকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি আমি দেখব। আপনি প্রিভিলেজ আনতে চাইলে আনতে পারেন। পরবর্তীতে সেই অনুসারে ব্যবস্থা হবে। পদক্ষেপ হবে।’ পার্থর নিরাপত্তার অভাববোধ প্রসঙ্গে যদিও শুভেন্দু বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। উনি কী বলেছেন ওনার ব্যাপার।”