কলকাতা: বারবার এই ছবি দেখা যায় রাজনীতির জগতে। আজ এ দল, কাল ও দল তো আকছাড় ঘটে। এমনকী মানুষ যাঁদের ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনেন, তাঁরাও ‘কথা রাখেন না’। এক দলের প্রতীকে ভোটে জিতে, দেখা যায় দল বদলে ফেলেছেন অনায়াসে। রাজনীতিকদের কথার দাম নিয়ে চায়ের ঠেকে হাতাহাতির উপক্রম হয়, উত্তাল হয় সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু যাঁদের নিয়ে এত লড়াই, সত্যি তাঁদের কি কিছু যায় আসে? গত কয়েক বছরে বারবার বাংলায় এ ছবি দেখা গিয়েছে। ভিন রাজ্যে জনপ্রতিনিধি ‘কেনা বেচার’ও অভিযোগ ওঠে। সাধারণ ভোটাররা বলেন, “এদের কোনও কথার দাম নেই”। কিন্তু রাজনীতিকরা কীভাবে দেখেন এই ঘটনাগুলো। রবিবার আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর যোগদান নিয়ে নানা প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে। সুমন কাঞ্জিলালকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি যে প্রতীকেই জিতুন কা কেন, মানুষ তাঁকে জেতান পরিষেবা পাবেন বলে। সেটা যথাযথ না গেলে শুধুমাত্র রাজনীতির জন্য রাজনীতি করে কী লাভ?
দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা অশোক ভট্টাচার্যের এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ, রাজনীতির প্রতি সততা, দায়িত্ববোধ ক্রমেই বাংলা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে। অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, “এই রাজনীতিটা এর আগে বাংলায় ছিল না। তৃণমূল আর বিজেপিই এই রাজনীতি এখানে আমদানি করেছে। এই ভদ্রলোকের দল ছাড়াও তারই নমুনা। মানুষ যাঁকে নির্বাচিত করলেন, সেই মানুষের রায়ের প্রতি আস্থা না রেখে, তার প্রতি মর্যাদা না দিয়ে নিজের পছন্দমতো দলবদল এটা। সততা, মর্যাদা, সম্মান, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ সবই পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে গিয়েছে। আর তা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি, তৃণমূল দু’দলই দায়ী।”
তবে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলছেন, “কেউ কোথাও যাচ্ছে না। তৃণমূলেও থাকা যা, বিজেপিতে থাকাও তা। সব নাটক চলছে।” উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কীভাবে দেখছেন এই দলবদল? রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, “আরও এমন অনেক সুমনবাবুই লাইনে আছেন। ধীরে ধীরে দেখতে পাবেন। বিজেপির উপর মানুষের আস্থা নেই। সাধারণ মানুষই তো ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সুমনবাবুরা আর ওই দলে থেকে কী করবেন?” তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ও বলছেন, “জোর করে তো কাউকে ধরে রাখা যায় না। ”
বিধানসভায় বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক তথা আলিপুরদুয়ার জেলারই আরেক বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার অবশ্য বক্তব্য, “দল ওনাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে। জেলার সাধারণ সম্পাদক থেকে একুশের ভোটে টিকিট দেওয়া বাদ যায়নি কিছুই। পদ্মফুল প্রতীকে জিতিয়ে ওনাকে বিধানসভায় পাঠানো হয়। উনি যদি আমাদের বলতেন আমরা নিশ্চয়ই একটা পথ বের করতাম। কোনও অভিযোগ থাকলে উনি আমাকেও বলতে পারতেন। আমিও তো ওখানকারই বিধায়ক। আমরা জানতামই না উনি এরকম করতে পারেন। টুইটে জানতে পারলাম।”