কলকাতা: বউবাজারের (Bow Bazar) পাতালে মেট্রো টানেলে জল-বিপত্তি। জলের স্তর একেবারে মাটির কাছাকাছি রয়েছে। সে কারণেই সামান্য খোঁড়াখুঁড়িতেই জল অত্যন্ত বেগে বেরিয়ে আসছে। নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হচ্ছে না। প্রতি মিনিটে ২০০ লিটার জল বেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা কেএমআরসিএল (KMRCL)। তবে ভূগর্ভের কাজ যে বন্ধ হচ্ছে না তা শুক্রবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন কেএমআরসিএল এমডি চন্দ্রেশ্বর নাথ ঝা। জল বেরোলেও শনিবার থেকে ফের কাজ শুরু হচ্ছে এই মেট্রো লাইনে।
কেএমআরসিএল জানিয়েছে, এই জল রোখা এখনই অসম্ভব। গ্রাউটিংয়ের কাজ চলছে। চওড়া করে এই গ্রাউটিং করা হয়েছে। যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে গ্রাউটিংয়ের জন্য, তার নাম পলিইউথিরিন। এই রাসায়নিক গ্রাউটিংয়ে ব্যবহার করার কারণ তা সহজে জলকে শুষে নেয়। এর ব্যবহারে কিছুটা উপকার হয়েছে ঠিকই। তবে এখানে জলের যে ফোর্স, তা রোখা যাচ্ছে না। এখনও অবধি মোট পাঁচটি হোটেলে ১৩৬ জনকে রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০টি বাড়ি খালি করা হয়েছে। তবে একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে কিংবা বাড়ির অবস্থা খারাপ। এরকম আরও ৩৫টি বাড়ি খালি করা হবে। তবে কাজ চালিয়ে যাবে মেট্রো।
কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? গত মে মাসে বিপত্তির পর এসপ্ল্যানেডের দিক থেকে আসা সুরঙ্গ ও শিয়ালদহের দিক থেকে আসা সুরঙ্গকে জুড়তে জয়েন্ট বক্স তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সেই জয়েন্ট বক্স বসানোর জন্য একটি স্ল্যাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় ৩৮ মিটারের স্ল্যাবের ২৯ মিটারের কাজ হয়ে গিয়েছিল। ৯ মিটার বাকি ছিল। তখন এসপ্ল্যানেডের দিক থেকে আসা সুরঙ্গের কাছে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে জল বেরিয়ে আসে। তাতেই একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। স্ল্যাব যেখানে তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে বাকি থাকা ৯ মিটারের মধ্যে ৩ মিটার অংশ তৈরি করা গিয়েছে। বাকি ৬ মিটার স্ল্যাব তৈরি করা বাকি রয়েছে। গত মে মাসে যেখানে বিপত্তি হয়েছিল, তার থেকে ১০০ মিটার দূরে এবারের বিপর্যয়।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো টানেল বোরিং মেশিন এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কাজ করার সময় ৫০০ মিটার অন্তর একটি করে ‘ক্রস প্যাসেজ’ করে গিয়েছে। এই ক্রস প্যাসেজের কাজ হচ্ছে, দু’টি টানেলের মাঝখানে থাকা। শিয়ালদহের দিক থেকে একটি টানেল রয়েছে এবং এসপ্ল্যানেডের দিক থেকে অপর টানেলটি রয়েছে। মেট্রো চলাচলের সময় যদি কোনও সময় বিপত্তি হয় তাহলে এই ক্রস প্যাকেজ দিয়ে যাত্রীদের এক লাইনের দিক থেকে অন্য লাইনে নিয়ে আসা হয়। তাই ক্রস প্যাসেজ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেএমআরসিএল অন্তর্গত নির্মাণকারী সংস্থার কর্মীরা এই ক্রস প্যাসেজে গ্রাউটিংয়ের কাজ করছিলেন। সেই সময় খোঁড়াখুঁড়িতে জল বেরিয়ে পড়ে। অগণিত ছিদ্র দিয়ে জল বেরোচ্ছে বর্তমানে। উচ্চমানের প্রযুক্তি এনে গ্রাউটিংয়ের কাজ শুরু করা হলেও জল বন্ধ করা যাচ্ছে না।