কলকাতা: স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বারবার নানা অভিযোগ ওঠে। সবথেকে বেশি অভিযোগ বোধহয় রোগী রেফার নিয়ে। অভিযোগ, মঙ্গলবার রেফারের বলি হলেন ২৬ বছরের এক যুবক। পরিবারের দাবি, শহর কলকাতায় একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে ভোরে এনআরএস (NRS) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মেঘনাদ চন্দ্র নামে ওই যুবককে। সেখানেই মারা যান তিনি। টালিগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন মেঘনাদ। তাঁর পরিবার এই ঘটনায় হাসপাতালের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ফুটবল খেলতে গিয়ে কিছুদিন আগে কুঁচকিতে চোট লাগে মেঘনাদের। এরইমধ্যে সোমবার বাইক থেকে পড়ে গিয়ে ফের আঘাত পান তিনি। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন ওই যুবক। সন্ধ্যায় পরিবারের লোকেরা হন্যে হয়ে এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ।
পরিবারের দাবি, প্রথমে এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই যুবককে। সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল ঘুরে পৌঁছন এনআরএসে। অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএসে। কিন্তু অভিযোগ, মেঘনাদকে চিকিৎসা না করে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলে পরিবার। যদিও এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। তা পাওয়া গেলেই যুক্ত করা হবে এই প্রতিবেদনে।
পরিবারের দাবি, সোমবার বিকেলে বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলেন মেঘনাদ। পায়ে আঘাত লাগে। বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এসএসকেএমে। পরবর্তীতে চিত্তরঞ্জনে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে বলা হয় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। তাই এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। রাতভর ঘুরে মঙ্গলবার ভোরে এনআরএসে পৌঁছয় পরিবার। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, এনআরএসে আসার পর দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা হয় মেঘনাদকে।
নিহতের এক আত্মীয় বলেন, “আমরা ভোর ৫টায় এনআরএসে যাই। সেই থেকে দাঁড়িয়ে লিফটের সামনে। যিনিই আসছেন, স্লিপ দেখছেন, বলছেন আরেকজন এসে দেখবেন। এই করতে করতে ৭টা সাড়ে ৭টা বেজে যায়। ডাক্তার এলেন, একটু দেখেই চলে গেলেন। এরপর বেডে নিলেও ডাক্তার ফেলে রেখে দেয়। গুরুত্বই দেননি। চোখের সামনে মরেই গেল।”
চিকিৎসক সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “গতকাল দুর্ঘটনা ঘটেছে। আজ সকালে এনআরএসে নিয়ে আসা হয়। এনআরএসে চিকিৎসাও শুরু হয়। পিজিটিরা দেখেন, ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। তাঁকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বাড়ির লোক কাগজপত্র তৈরি করছিলেন। সেইসময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যান। যে কোনও মৃত্যুই খুব দুঃখের। আশা করব আগামিদিনে এই ঘটনাগুলো কমবে। অযথা কাউকে রেফার করা হলে তাও বন্ধ হবে।”
এ বিষয়ে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, “একজন এমার্জেন্সি রোগীকে এতগুলো হাসপাতাল ঘুরতে হবে কেন? তবে সরকার বারবার বলছে, রেফার করা যাবে না। আমরা বলব, হাসপাতালগুলোর কী পরিকাঠামো তা একটু গিয়ে দেখে আসুক। আদেশনামা প্রকাশ করে দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ জানেই না কতজন চিকিৎসক আছেন, কতজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, কী পরিকাঠামো। অনেক সময় অনেক চিকিৎসক বাধ্য হচ্ছেন রোগীকে রেফার করতে। সব দায় চিকিৎসকদের দিকে চাপিয়ে দেওয়া, এই প্রবণতাও বন্ধ হওয়া দরকার।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, তিন হাসপাতাল ঘুরে এসে এই মৃত্যু কেন হল তা তদন্ত করে দেখা দরকার।