কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির (BJP) সাংগঠনিক ভিত কতটা শক্ত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের কর্মীরাই। বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ, পুরনো বিজেপি কর্মী এবং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে ‘দূরত্ব’, দলের শীর্ষনেতাদের মধ্যে কোন্দলের অভিযোগ, সবমিলিয়ে বিজেপির অন্দরে অভিযোগের তালিকা নেহাত ছোট নয়। এমনও শোনা যায়, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে নাকি সব গ্রামপঞ্চায়েতে প্রার্থীও দিতে পারবে না তারা। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, প্রতিটি পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেবে গেরুয়া শিবির। তবে রাজ্য সভাপতি যাই বলুন না কেন, এ কথায় ভরসা নেই দলের বহু পুরনো কর্মীর। তাঁদের কাউকে কাউকে আবার ‘বিক্ষুব্ধ বিজেপি’ও বলেন অনেকে। সূত্রের খবর, এরকমই কিছু বিজেপি কর্মী বছর দু’য়েক আগে তৈরি করেন ‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ W.B’। বিভিন্ন সময় তাঁরা নানা কর্মসূচিও নেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা মনেপ্রাণে বিজেপি। দলের উন্নতিই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। তাঁরা মনে করছেন, বিজেপি সব জায়গায় প্রার্থী দিতে পারবেন না। তাই নির্দল হিসাবে তাঁরাও প্রার্থী দেবেন বিভিন্ন জায়গায়। জিতলে সেই ভোট যাবে বিজেপির ভোটবাক্সেই।
‘বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ W.B’র তরফে রবিবার এক বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে তারা জানিয়েছে, ‘আগামী পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য বহু বুথে প্রার্থী দিতে পারবে না। আমাদের বৈঠকে ২২ জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা যারা বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী, যারা পার্টিঅন্ত প্রাণ, তারা উপরতলার নেতৃত্বের ভরসায় আর থাকবে না। প্রয়োজনে দলের আদর্শকে রক্ষা করতে নিজ নিজ বুথে প্রার্থী দেবে, নির্দল হিসাবে। কারণ, বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পার্টির আদর্শকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এরই প্রতিবাদে আমরা আগামী পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে অবতীর্ন হব। প্রয়োজনে অন্যান্য ছোট ছোট দলের সঙ্গে জোট করেও নির্বাচনে লড়ব।’
এই মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ জানুয়ারি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বঙ্গসফরে আসছেন। সেই সফরে নাড্ডার সাক্ষাৎ চেয়ে ইমেলও করেছে তারা। বাংলায় এই সংগঠনকে কুক্ষিগত করার খেলা খেলছেন তিন চারজন বলে দাবি করেন তাঁরা। তারা জানিয়েছে, আগামী ত্রিস্তরীয়পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের ব্যানারে প্রার্থী দেবে তারা। তাদের দাবি, শাসকদলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে দলের অনেকেই। তাই ভোটে যোগ্য লড়াকু প্রার্থীরা উপেক্ষিত। গত উপনির্বাচন, পুরসভার ভোট বা কলকাতা পুরনিগমের ভোটের ফল তা বুঝিয়ে দিয়েছে বলেও দাবি তাদের।
একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, দলের নিচুতলার কর্মীদের দূরে ঠেলে অন্য দল থেকে আসা লোকজন দিয়ে সংগঠন চালানো হচ্ছে। এই বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ যে বঙ্গ বিজেপির বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে তা এক কথায় স্পষ্ট। যদিও এ বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ক্ষোভ বিক্ষোভ কারও থাকতেই পারে। তবে এরা বিক্ষুব্ধ বিজেপি বললে ঠিক হবে না। এখানে বহু পুরনো দিনের বিজেপি কর্মী আছেন। তাই আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা খোঁজা উচিত।