কলকাতা: তৃণমূলের (Trinamool Congress) অভিযোগ, বাম আমলে চিরকুটে চাকরি হয়েছে, আর সেই চাকরি পেয়েছেন নেতাদের স্ত্রী, সন্তান, পরিচিতরা। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার শাসকদলের রাজ্যস্তরের নেতা থেকে জেলার নেতারা। এই বিতর্ক নতুন মোড় নিল বৃহস্পতিবার। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন আদালতের বাইরে দাবি করেন, “যে সুজন চক্রবর্তী, দিলীপবাবু, শুভেন্দুবাবুরা বড় বড় কথা বলছেন। তাঁরা নিজেদের দিকে দেখুন। উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন। ২০০৯-১০-এর ক্যাগ রিপোর্ট দেখুন। সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছেন। আমি তাঁদের বলেছি করতে পারব না। আমি নিয়োগ কর্তা নই। এ ব্যাপারে সাহায্য তো দূরের কথা, কোনও বেআইনি কাজ করতে পারব না।” এদিকে পার্থর এই বক্তব্যের পরই আরও কিছুটা বিতর্ক উস্কে দিয়ে কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী একটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। সেখানে একটি রিপোর্ট তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর দাবি, বহুচর্চিত ২০০৯-১০ সালের ক্যাগের রিপোর্টের একটি অংশ এটি।
শিক্ষায় নিয়োগ-বিতর্ক।
দিলীপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য ও আরও কয়েকজন চাকরির সুপারিশ করেছিলেন কি?
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ করেছিলেন কি?
তদন্ত হোক।
কেন্দ্রীয় এজেন্সি একমুখী কাজ না করে নিরপেক্ষ কাজ করুক।— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 23, 2023
কলকাতার ৯৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী ফেসবুকে একটি রিপোর্টের অংশ শেয়ার করে লেখেন, ‘এই সেই ২০০৯-১০ সালের CAG রিপোর্টের একটা অংশ। এতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ২০০৯ ও ২০১০ সালের Head Master নিয়োগ, ২০০৯ ও ২০১০ সালের Assistant Teacher নিয়োগ, ২০১০ সালের Clerk নিয়োগ, ২০১০ সালের Group-D নিয়োগ আর ২০১০ সালের Librarian নিয়োগ পুরোটাই অনিয়ম, বেনিয়ম আর অস্বচ্ছতায় ভরা। বাম আমলে সেই নিয়োগ হয়েছে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে। শুধু এখানেই দেখা যাচ্ছে যে প্রায় ৫০০০০ জনের স্কোরশিট সেটা অডিট রিপোর্টের সাথে মিলছে না। অর্থাৎ বাম আমলে নিয়োগে যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে কীভাবে সেটা ক্যাগের রিপোর্টে এই রিপোর্টেই ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে। আজকে তারাই গলার শিরা ফুলিয়ে অন্যকে চোর বলে যাচ্ছে। সাধে কী আর বাংলার এই প্রবাদ এত জনপ্রিয়, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’।’
বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ শাসকদলকে যখন ফালা ফালা করতে বাম-বিজেপি-কংগ্রেস এককাট্টা, তখন শাসকদলও যে পাল্টা তেড়েফুঁড়ে নামছে এদিন সে ইঙ্গিতই স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার সকালে একটি টুইটে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘শিক্ষায় নিয়োগ-বিতর্ক। দিলীপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য ও আরও কয়েকজন চাকরির সুপারিশ করেছিলেন কি? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অনুরোধ করেছিলেন কি? তদন্ত হোক। কেন্দ্রীয় এজেন্সি একমুখী কাজ না করে নিরপেক্ষ কাজ করুক।’
এর কিছুক্ষণ পরেই আদালতের বাইরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গিয়েছে ক্যাগের রিপোর্টের কথা। আর সেই রিপোর্টের অংশ ফেসবুকে তুলে ধরলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা দলীয় মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। যদিও সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, গোটা বিষয়টি একটি ‘অলীক কুনাট্য’। আর তাতে সকলে ‘লিপ দিচ্ছেন’। সুজন চক্রবর্তীর দাবি, এসব সাজিয়ে গুছিয়ে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে সুজনের বক্তব্য, ২০০৯-১০ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। তাঁর কাছে কেন সুপারিশ করা হবে?