রাজনীতির ছায়া যেন প্রকৃতিতেও (Weather Update)। কেন্দ্রীয় বরাদ্দে বঞ্চনার অভিযোগ ঘিরে দিল্লি-বাংলায় বছরভর তরজা চলে। সিপিএম গিয়ে তৃণমূল এসেছে, কিন্তু বঞ্চনার অভিযোগে ইতি পড়েনি। এবার বঙ্গবাসী সমস্বরে প্রকৃতির কাছে নালিশ ঠুকতে পারেন। শীতেও যেন ‘দিল্লির বঞ্চনা’। আর কী-ই বা বলা যায়? পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে উত্তর ভারত জুড়ে হাড়-হিম ঠান্ডা। রবিবার রাজস্থানের চুরুতে পারদ নেমেছে মাইনাস ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ০.৩ ডিগ্রি পারাপতন হলেই ভেঙে যাবে মরুশহরের দশ বছরের রেকর্ড। দিল্লির রিজ, আয়ানগরে তাপমাত্রা নেমেছে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসে। হিমেল হাওয়ায় জবুথবু রাজধানী। অথচ, মাঘের পয়লা দিনেও কলকাতায় ‘গরম’। বস্তুত, কলকাতার সকালের চেয়েও দিল্লিতে দুপুরে বেশি ঠান্ডা। রবিবার দিল্লির সফদরজঙের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭.৮ ডিগ্রির উপরে ওঠেনি। আর আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাই ছিল ১৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। উত্তরবঙ্গের মালদহ, পশ্চিমাঞ্চলের বাঁকুড়াতেও পারদ রয়েছে ১৪-১৫ ডিগ্রিতে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমবে। অর্থাত্, কিছু কিছু তল্লাটে হালকা শীত ফিরলেও ফিরতে পারে। কিন্তু পরবর্তী তিনদিনে আবার ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়তে পারে। অর্থাত্, যথা পূর্বং তথা পরম। কলকাতা ও লাগোয়া জেলায় আদৌ জাঁকিয়ে শীত ফিরবে কি না, তা নিয়েই সংশয়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশচন্দ্র দাস বলছেন, ‘‘তাপমাত্রা কমবে, কিন্তু কলকাতায় স্বাভাবিকের নীচে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পারদ পনেরোর নীচে না নামলে শীতের অনুভূতিও তেমন পাওয়া যাবে না।’’
বর্ষায় যেমন রোজ বৃষ্টি হয় না, তেমন শীত কখনওই একটানা থাকে না। এক-একটি স্পেলে শীতের দাপট বাড়ে, কমে, আবার বাড়ে। যেমন আগের স্পেলে দিল্লির তাপমাত্রা যখন দুয়ের ঘরে নামে, তখন কলকাতাও ১০.৯ ডিগ্রির শীতের ছোঁয়া পেয়েছে। কিন্তু এ বার একযাত্রায় পৃথক ফল। দিল্লি কাঁপছে। কলকাতা চাতকের মতো অপেক্ষায়।
কেন দিল্লির ঠান্ডার ভাগ কলকাতা পাবে না?
এর পিছনে উচ্চচাপ বলয়ের হাত দেখছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরের উপর একটি উচ্চচাপ বলয় থাকছে। তার প্রভাবে ক্রমাগত জলীয় বাষ্প ঢুকবে। ফলে উত্তুরে বা উত্তুরে-পশ্চিমী হাওয়া বাধাহীন ভাবে বইতে পারবে না।’’ দখিনা-পশ্চিমী বাতাসের হাত ধরে বর্ষা আসে। আর উত্তুরে-পশ্চিমী বাতাস শীত হাজির করে বাংলায়। সেই বাতাসই যদি ঢুকতে না পারে, তাহলে ঠান্ডা বাড়বে কীভাবে? আসছে আরও খলনায়ক। বলা ভাল, জোড়া খলনায়ক। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘১৮ ও ২০ জানুয়ারি পর পর দু’টি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকবে। তখন দিল্লি-সহ উত্তর ভারতেও ঠান্ডা কমবে। ফলে একটানা অনেক দিনই তাপমাত্রা কমার সুযোগ থাকবে না।’’
চলতি মরসুমে কলকাতার শীতলতম দিন ছিল ৬ জানুয়ারি। তবে মাসের শেষ ভাগেও বেশ কয়েকবার শীতলতম দিন পেয়েছে মহানগর। গত মরসুমেই কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়েছিল ৩০ জানুয়ারি। তাপমাত্রা নামে ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি তাপমাত্রা নামে ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ বার সেই সুযোগ কিছুটা কম বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতে জাঁকিয়ে শীত আর ফেরার আশা দেখা যাচ্ছে না।’’