কলকাতা: তিনি বলেছিলেন, গ্রাউন্ড জিরোর রাজ্যপাল হতে চান। আর আজ ভোটের দিন আক্ষরিক অর্থেই সেই ভূমিকায় দেখা গেল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে। ভোট শুরুর আগেই বেরিয়ে পড়েছিলেন রাজভবন থেকে। সকাল ছ’টা নাগাদ। দিনভর মাঠে-ময়দানে ঘুরে দেখেছেন বাংলার ভোট-চিত্র। পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকাল থেকে যা দেখলেন তিনি, তাতে ভীষণ মর্মাহত বাংলার সাংবিধানিক প্রধান। বলছেন, ‘ভেরি ডিসটার্বিং।’ জায়গায় জায়গায় হিংসা, খুনোখুনির অভিযোগ উঠে এসেছে, সেসব কিছুই নজর এড়ায়নি রাজ্যপালের। বাংলার সাংবিধানিক প্রধানের স্পষ্ট কথা, ‘সাধারণ মানুষ শুধু একটু শান্তিতে, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মোটেই সুখকর নয়। হিংসার জন্য একেবারে মেনু তৈরি করে ফেলা হয়েছে। যারা অশান্তি পাকাচ্ছে, তারা একেবারে মেনু তৈরি করে ফেলেছে। কী চাই! খুন চাইলে খুন, ছুরিকাঘাত চাইলে ছুরিকাঘাত, বুলেট চাইলে বুলেট। যেন বেছে নেওয়ার অপশন করে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কারও পক্ষেই সুখকর নয়।’
আনন্দ বোস বলছেন, ‘আমি দেখলাম, যাঁরা মারা যাচ্ছেন… তাঁরা অত্যন্ত গরিব। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরাও অত্যন্ত গরিব ঘরের। কিন্তু ঘটনার সময়ে কোনও নেতা সেখানে নেই।’ বাংলার সামগ্রিক ভোটচিত্র দেখে হতাশা ঝরে পড়ছে রাজ্যপালের গলায়। বলছেন, ‘আমাদের উচিত দারিদ্র দূর করা। কিন্তু তা না করে, আমরা দরিদ্রদের মারার চেষ্টা করছি। বাংলা এটা চায় না, এটা বাংলার প্রাপ্য নয়।’ সমাজে শান্তির অভাব রয়েছে আর সেই অভাব বাংলার নতুন প্রজন্মের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলেই মনে করছেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের অশান্তি দেখে রাজ্যপাল বললেন, ‘সমাজ ব্যবস্থায় রাজনীতির গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু রাজনীতির নামে হিংসা বা অশান্তি কখনওই কাম্য নয়।’
রাজভবনে যে পিস রুম চালু করা হয়েছে, তা শুধু ভোটের জন্য নয়। সমাজে শান্তি বজায় রাখতে এটা আগামী দিনেও চালু থাকবে বলে জানালেন রাজ্যপাল বোস। তাঁর অবস্থান যে একেবারেই অরাজনৈতিক সেই কথাও স্পষ্ট করে দেন। বললেন, ‘আমি রাজ্যপাল হিসেবে নিজের লক্ষ্মণরেখা জানি। কিন্তু হিংসা, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়।’