কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোট কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ তুলছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপিও বলছে, এই ভোট হল এক ‘অসম্পূর্ণ’ নির্বাচন। কারণ, জায়গায় জায়গায় ভোট লুঠের অভিযোগ উঠে এসেছে। সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীদের জয়ী প্রার্থীদের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। কোথাও আবার জয়ী প্রার্থীকে ‘হারিয়ে’ শাসক দলের প্রার্থীকে সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ। বঙ্গ বিজেপির সন্দেহ, এই যাবতীয় অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিডিওদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত থাকতে পারে। তাই প্রত্যেক বিডিওর খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করে নিতে শুরু করেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে সব বিডিওর বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, এই কাণ্ডের পিছনে বড় মাথা হিসেবে কাজ করছেন বিডিওদের একাংশ, এমনই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। সেই কারণেই এবার ওই বিডিও-দের সব কাজকর্মের উপর নজর রাখছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, বিশেষ করে ২০১১ সালের পর যেসব বিডিও এসেছেন, তাঁদের উপর বাড়তি নজর দিচ্ছে দল। তাঁদের অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ঢুকেছে, কোনও ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রকমের কোনও অর্থ ঢুকেছে কি না, সেই সব দিকগুলি দলীয় তদন্তে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।
এই তথ্যগুলি দিয়ে কী করা হবে সেই বিষয়টি অবশ্য খোলসা করেননি বিজেপি মুখপাত্র। তবে দলীয় সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, দলীয় তদন্ত থেকে প্রাপ্ত এই তথ্যগুলি একত্রিত করে, কোথাও কোনও অসঙ্গতি দেখতে পেলে, সেটা নিয়ে আদালতে যেতে পারে বঙ্গ বিজেপি। প্রয়োজনে ইডিকে মামলায় যুক্ত করার আর্জিও জানানো হতে পারে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। বিডিও-রা হলেন রাজ্যের ক্যাডার, তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নজরেও বিজেপি বিষয়টি নিয়ে আসতে চাইছে বলে খবর। তবে গোটা বিষয়টাই অত্যন্ত গোপন রাখা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘এমন অনেক পঞ্চায়েত রয়েছে যেখানে বিরোধীরা জিতে যাচ্ছিল। কিন্তু রাতের অন্ধকারে তাঁদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে সার্টিফিকেট বদল করে দেওয়া হয়েছে। এই বিডিওদের আমরা চিহ্নিত করে রেখেছি। শুধু চিহ্নিত করাই নয়, বিডিওরা কোথায় থাকেন, তাঁদের অতীত বা বর্তমানে কোথায় কোথায় কী করছেন? এবারের পুরস্কারের টাকায় কী কাজ হয়েছে? সেই সমস্ত দিকের উপরেই আমরা নজর রাখছি।’
অর্থাৎ, ভোটের শুরু থেকে গণনা পর্যন্ত বিডিও-দের প্রতিটি পদক্ষেপ এবার পদ্ম শিবিরের স্ক্যানারে। শুধু তাই নয়, তাঁদের কোনও রাজনৈতিক শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কীরকম তাও নজরে রাখবে বিজেপি। সেই কারণে, বিজেপি তরফে এবার দলীয় স্তরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই বিডিওদের পূর্ব পরিচয়ও জোগাড় করার জন্য। কোন সালে তাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে বলে খবর।