কলকাতা: বাহিনী নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল। রাজ্যের চাহিদা মতো ৮২২ কোম্পানির মধ্যে বাকি ৪৮৫ কোম্পানিও মঞ্জুর করে দিল কেন্দ্র। অর্থাৎ রাজ্যে আসতে চলেছে ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদালত অবমাননার মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে হলফনামা জমা দেয় কমিশন। এদিনের শুনানির সময়ে কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীও দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বাহিনী সঙ্কটে দফা বাড়ানোর প্রয়োজন আর পড়বে না। ৮২২ কোম্পানিতে এক দফাতেই ভোট হবে বাংলায়।
সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি ছিল। কমিশনের তরফে হাইকোর্টে একটি হলফনামা জমা দেওয়া হয়। হলফনামায় উল্লেখ ছিল, রাজ্যে ৪৮৩৪ টি বুথ স্পর্শকাতর। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা অসম্ভব। তখনও অবশ্য কেন্দ্রের তরফে বাকি ৪৮৫ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেওয়া হয়নি। কমিশনের তরফে তখন আদালতে জানানো হয়েছিল, স্পর্শ কাতর বুথে থাকবে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী। সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে এসেছে ২২৪ কোম্পানি বাহিনী।
বুথ আছে ৬১,৬৩৬ হাজার মত। কমিশনের তরফে বলা হয়, যদি ১ জন করেও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়, তাহলেও সব বুথে সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। যা বাহিনী রয়েছে ২৬,৯৬০ বুথ বাহিনী পাবে।
কমিশনের পাশাপাশি রাজ্যও বলে, সমস্যা সেখানেই। আর সেই কারণেই ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতির কাছে কমিশনের আইনজীবী সওয়াল করেন, সেক্ষেত্রে মোবাইল ইউনিট হিসেবে বাহিনী ব্যবহার যেতে পারে। একটা ইউনিটে তাহলে ৫-৬ জন করে থাকবে। যারা কম পক্ষে ৬ টি করে বুথে নজর রাখবে। তখনও পর্যন্ত অবশ্য রাজ্য জানত না বাহিনী আরও আসছে।
এরপরই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীও মঞ্জুর করে দিয়েছে কেন্দ্র। অর্থাৎ বাহিনী নিয়ে যে ধন্দ তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটে আদালতে। কারণ রাজ্য প্রথমে পুলিশ দিয়েই নির্বাচন করাতে চেয়েছিল। কিন্তু মনোনয়ন পর্ব থেকে যে অশান্তি শুরু হয়েছিল, তাতে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর পক্ষে সওয়াল করেন। আদালতেরও পর্যবেক্ষণ ছিল, বাহিনী দিয়েই ভোট হোক। রাজ্য প্রথমে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চায়। কিন্তু এই বাহিনী দিয়ে এতগুলো বুথে কীভাবে ভোট সম্ভব, তা নিয়েই উঠতে থাকে প্রশ্ন। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, অন্তত স্পর্শকাতর বুথগুলিতে যাতে বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এরপর রাজ্য কেন্দ্রের কাছে ৮২২ কোম্পানি বাহিনী চায়। কেন্দ্র প্রথমে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী মঞ্জুর করে। অর্থাৎ আগের ২২ কোম্পানি, তার সঙ্গে ৩১৫ কোম্পানি অর্থাৎ ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী হয়। তবে সেই বাহিনীও কোন বুথে মোতায়েন থাকবে, তার কার্যকারীতা কী হবে, তা নিয়েও চলে জলঘোলা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক- কমিশনেপ মধ্যে চলে চিঠি আদানপ্রদান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দু’বার বৈঠকেও বসা হয় কমিশনের সঙ্গে। তার সেই জটিলতা কাটিয়ে রাজ্যে আসে ২২৪ কোম্পানি বাহিনী। কিন্তু তাতেও কীভাবে এক দফাতে বাহিনী দিয়ে নির্বাচন সম্ভব, প্রশ্ন থেকে যায়। বিরোধীরা পঞ্চায়েতের দফা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেন। এরপর আদালতে সোমবার কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীও পাঠাতে রাজি কেন্দ্র।
তবে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এই ৪৮৫ কোম্পানি কবে এসে পৌঁছবে? সেই বাহিনী এসে পৌঁছনোর পর শারীরিক ধকল কাটিয়ে, রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এলাকা চেনা, এলাকার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় কি আদৌ পাবে? কারণ ভোটের মাত্র আর চার দিন। সেখান থেকেই প্রশ্ন এই বাহিনী ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে এবং অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে?