কলকাতা: বেহালায় যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় মহাদাপটে, সে সময় বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের নামও দাপটের সঙ্গেই উচ্চারিত হত দক্ষিণ কলকাতার একটা বড় অংশে। কলকাতার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য কলকাতা পুরনিগমে শাসকদলের মুখ্যসচেতকও। এছাড়া যে নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো পার্থর পুজো হিসাবে পরিচিত, সেখানেও সবটা সামলানোর ভার পার্থ দিতেন এই বাপ্পাদিত্যকেই। এই বাপ্পাদিত্যকে সকলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই চেনেন। তবে রাজনীতির অলিন্দে বাপ্পাদিত্যর ঘোরাফেরা আরও বহু আগে থেকে।
প্রয়াত বিজেপি নেতা তপন শিকদারের অনুগামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। তবে যে সময় বাপ্পাদিত্য বিজেপির সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেষি করে থেকেছেন, সে সময় বাংলায় সে অর্থে বিজেপির তেমন হাঁকাহাঁকি ছিল না। তাই এলাকার লোকজন ছাড়া, বাপ্পাদিত্যর এই ‘অতীত’ হাতে গোনা কয়েকজনই জানেন হয়ত।
২০০৬ সালে আবার বেহালার নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উত্থান হচ্ছে। বাপ্পাদিত্য সে সময় শিবির বদলাতে থাকেন বলেই শোনা যায়। ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডে যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় কর্মরত, সেখানেই তাঁর বাপ্পাদিত্যর সঙ্গে আলাপ। বাপ্পাদিত্য হিউম্য়ান রিসোর্সের বা এইচআর হিসাবে কাজ করতেন সেখানেই। বাপ্পাদিত্য এমনও বলেছেন, পার্থর কাছ থেকে কাজ শিখেছেন তিনি। তবে তাঁদের বয়সের ফারাক অনেকটাই। আর সেই ফারাকই পার্থকে বাপ্পাদিত্যর ‘গুরু’র আসনে বসিয়ে দেয়। গুরুর হাত ধরেই এরপর পুরোদমে রাজনীতিতে নামেন বাপ্পাদিত্য।
২০১৫ সালে পুরভোটে টিকিট পান পাটুলির বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। অনেকে বলেন, এ টিকিট নাকি ‘গুরু’রই বদান্যতায়। ভোটেও জেতেন। পরপর দু’বার কাউন্সিলরও হন। স্ত্রী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। বাপ্পাদিত্য নিজেও শিক্ষিত। প্রায় ২২ বছর চাকরি করেছেন। পাটুলির বুকে সাড়ে তিন তলা বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই বলেন, এত বছর চাকরি, নিয়মিত আয়করও দেন। বাড়িটা তিনি করতেই পারেন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই একাধিকবার বাপ্পাদিত্যর নাম ভেসে এসেছে। বৃহস্পতিবার সেই বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তরই বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। সূত্রের খবর, প্রায় ১০০ পাতার নথি তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন তদন্তকারীরা। সঙ্গে নাকি মিলেছে সুপারিশপত্র, অ্যাডমিট কার্ডও। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাপ্পাদিত্যর ভূমিকা কী তা তো তদন্তকারীরাই দেখছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁকে। নাকতলার পুজো সংক্রান্তও কিছু প্রশ্ন করা হয় বলে খবর। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত কি প্রশ্ন করা হয়েছে তা তিনি তদন্তের স্বার্থে বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, তদন্তে সহযোগিতা করবেন।