কলকাতা: বুধবার নিউটাউনে ছিল তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী। সেখানে শাসকদলের একাধিক বিধায়কের আমন্ত্রণ থাকলেও ডাক পাননি রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় (MLA Tapas Chatterjee)। এরপরই ক্ষোভ উগরে দেন তাপস। বলেন, “নিউটাউনে কোনও অনুষ্ঠানেই আমি থাকি না। অন্য দল থেকে এসেছি বলে আর কী কী পরীক্ষা দিতে হবে জানি না। আমি বোধ হয় চাকরের কাজের যোগ্য, বাবুর কাজের যোগ্য নয়।” তাপস চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য ঘিরে শোরগোল শুরু হয়। ঠিক তার একদিন পর বৃহস্পতিবার টিভি নাইন বাংলার ম্যানেজিং এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচার্যকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও বিস্ফোরক এক সময় সিপিএমে থাকা নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়। এদিনের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বারবার তাপস চট্টোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গেল একটাই কথা, দলের অন্দরে কথা বলার সুযোগের বড্ড অভাব। বড্ড কোণঠাসা তিনি।
তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দিদি আমাকে বিধায়ক করেছেন। আসা মাত্র ডেপুটি মেয়র করেছেন। তবে এখন মনে হচ্ছে দলের যে স্ট্রাকচর তাতে আমি যেটায় অভ্যস্ত সেটার একটা অভাব হচ্ছে। দল বলে যে কমিটিগুলো হয়, বসে কোনও আলোচনা হয় না। যদি এক জায়গায় বসে কোনও আলোচনা না হয় তা হলে মনের খিদে মিটবে না। আলোচনা ছাড়া কোনও বিষয় হলে যা হয় তাই হবে। এটার একটা অভাব আমি বোধ করছি।”
তৎকালীন রাজারহাট গোপালপুর পুরসভার দাপুটে বাম কাউন্সিলর এখন তৃণমূলের বিধায়ক। ৬১ বছর বয়স বয়স তাঁর। এই বয়সে এসে তিনি কোথাও যেন মূল্যায়নের অভাব বোধ করছেন দলের অন্দরে। তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কোথাও যেন নেত্রীর কাছে কেউ প্লেস করতে দিচ্ছেন না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার খুব প্রিয় লিডার। আমার এই জায়গায় আসার মূলে তাঁর একটা অবদান আছে। ইদানিং মনে হচ্ছে কেউ বা কারা তাঁকে মিসগাইড করছেন। একটা কথা বলতে গেলে এক বছর অ্যাপয়েন্টমেন্টই পাই না। কাকে বলব? দলের মধ্যে তো আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
দীর্ঘদিন বাম রাজনীতি করে তৃণমূলে এসেছেন বছর আটেক হতে চলল। এখন কোথাও গিয়ে তাপস চট্টোপাধ্যায়ের মনে হচ্ছে, তিনি অন্য দল থেকে আসায় পরীক্ষা দিতে হবে। তাপসের কথায়, “সে তো আট বছর হয়ে গেল। এতদিন ধরে দল কোনও দায়িত্ব দিয়েছে আমি অবহেলা করেছি তা কিন্তু হয়নি।” এদিন সাক্ষাৎকারে বারবার মমতা-অভিষেকের প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। তবে একইসঙ্গে তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “দলের অন্দরে যে বলব, দেড় বছর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সাক্ষাৎ পাই না। যখন আমাদের বোর্ড ভেঙে গেল আমার নামটা হঠাৎ বাদ চলে গেল। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করলেন। বললেন, সব্যসাচীকে আমি দলে নিচ্ছি। ও অন্য জায়গায় কাজ করবে। উনি বলেছেন এটাই শিরোধার্য। আমি কোনওদিনই কিছু বলিনি। তখন শুধু বললাম, দিদি আমি কেন বাদ? উনি বললেন, আমি তো জানি না। সঙ্গে সঙ্গে উনি নির্দেশ দিলেন ফিরহাদ হাকিমকে। আমার নামটা যুক্ত হল। এটাও শুনেছি এটার জন্য নাকি কারও কারও রাগ হয়েছিল।”
আবারও তাপস বলেন, “দলে তো বলার জায়গা হতে হবে। দলে রিজারভেশনে বিশ্বাসী আমি। দলকে ডিঙিয়ে মিডিয়াতে বলায় আমি বিশ্বাসী নই। আমাকে দিদি যদি বলে তুমি অযোগ্য, আমি এখান থেকে গিয়ে দিদিকে পদত্যাগপত্র দিয়ে দেব। যাকে দরকার হবে তার হয়ে ভোটে প্রচার করব। কোথাও মনে হচ্ছে আমি খুব নেগলেকটেড হচ্ছি।”