কলকাতা: গত কয়েকদিনে একাধিকবার তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বক্তব্যে অন্য সুর শোনা গিয়েছে। কখনও তাঁর বক্তব্যের মধ্যে উঠে এসেছে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ইঙ্গিত, কখনও আবার বলেছেন, ‘সিলেক্টররা’ বাদ দিয়ে দেওয়ার আগেই সরে যাওয়া শ্রেয়। বারবার এই বিদায়ের কথা কেন বলছেন বিধানসভার উপ মুখ্যসচেতক, তা এখনও মলাটেই ঢাকা, তবে না বলেও ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেক কিছুরই। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় প্রকাশ্যে এমন অনেক কিছুই বলছেন, যা দলকে অস্বস্তিতে বাড়াচ্ছে। যেমন শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক, বর্তমানে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের সমীহ-শ্রদ্ধার প্রকাশ নিয়ে বলতে গিয়ে তাপস রায়ের কিছুটা গলা ভার ছাত্র পরিষদগুলির উপর।
এদিন তাপস রায় বলেন, “সমাজের অবক্ষয় তো সর্বত্রই পৌঁছেছে। আমার অনুরোধ, শিক্ষকরা বাবা মায়ের পরেই। কেউ তো বলেন বাবা মায়ের সমান শিক্ষকরা। আমি তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ছাত্রনেতা। আমহার্স্ট স্ট্রিটের ছেলে। সেন্ট পলস কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি। ২৫ জানুয়ারি, কলেজ ডে। আমি শুধু বলেছিলাম সকলে ব্লেজার পাচ্ছে না, আমিও ব্লেজার নেব না। সকলের সামনে ঠাস করে চড় মেরেছিলেন আমার প্রিন্সিপাল। মনে আছে, এরপর আমরা দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। ভাবুন আমি অমন দাপুটে পাড়ার ছেলে, চড় মারলেন প্রিন্সিপাল। আজকের দিনে ভাবতে পারে কোনও ছেলে? ছাত্রদের কলেজ ইউনিয়ন, জেনারেল সেক্রেটারি, তাঁর গালে একটা চড় দেবেন প্রিন্সিপাল, তার পর তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন! এই জিনিসগুলো কিন্তু সকলের দায়িত্ব।”
বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কলেজেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যাপক ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের তোলা অভিযোগ যে আমল না দেওয়ার মতো এমন নয়, আবার এমনও হয় পাশ করিয়ে দেওয়া বা অনলাইন পরীক্ষার দাবি বা ক্লাস না করেও অ্যাটেসডেন্স দেওয়ার দাবি তুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষযজ্ঞ বাধান পড়ুয়াদের একাংশ। ছাত্র সংসদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। রাজ্যের সিংহভাগ কলেজেই এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদ শাসকদলেরই। নিঃসন্দেহে তাপস রায়ের এই বক্তব্য এক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
যদিও তাপস রায়ের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “তাপসদা নেতিবাচক ভেবে কিছু বলেছেন বলে মনে হয় না। আমাদের শিক্ষকদের মনে আছে। তাঁদের ভয় পেতাম। এখন শিক্ষক কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেও সেটা ইস্যু হয়। তাপসদা একজন সিনিয়র নেতা, দক্ষ সংগঠক। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। সেই সব নেতার থেকে যে কোনও ধরণের মূল্যায়নই গ্রহনীয়। একটা শব্দে কটাক্ষ বা প্রশংসা হয় না। তার মূল্যায়ন সবাই নেয়।”
রবিবারই বরানগরে এক অনুষ্ঠানে তাপস রায়কে বলতে শোনা যায়, “আর কয়েকটা বছর হয়ত… বেশিদিন রাজনৈতিক কর্মী থাকার ইচ্ছাও নেই। থাকবও না।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, সময় মতো অবসর না নিলে, গাভাসকারের মতো ব্যাট তুলে না নিলে, অনেক সময় সিলেক্টররা বাদ দেন। যা নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে তবে কি এবার রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন তাপস?
এ নিয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তাপস রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। বরানগর থেকে পদত্যাগ করে দেখান। জহর সরকার তৃণমূল। উনি কিন্তু ওনার জাত চিনিয়ে দিয়েছেন।” যদিও কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “তাপসদা দলের সম্পদ। অব্যাহতি চাইলেই, দেবে কে? তিনি দক্ষ সংগঠক। নানা কাজে অভিজ্ঞ। সরে যাওয়ার কথা ভাবলেও কে ছাড়বেন ওনাকে?”