Panchayat Election 2023: গোঁজ প্রার্থী কী? কেন শুধু পঞ্চায়েতেই এদের ছড়াছড়ি?

Pradipto Kanti Ghosh | Edited By: Soumya Saha

Jun 19, 2023 | 11:19 PM

West Bengal Panchayat Elections 2023: পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে এই ধরনের গোঁজ প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার প্রবণতা অনেকটা বেশি থাকে। এর মূল কারণ হল, প্রার্থী হতে গেলে কম অর্থ জমা দিতে হয়। এছাড়া একজন মাত্রা প্রস্তাবক হলেই চলে যায়।

Panchayat Election 2023: গোঁজ প্রার্থী কী? কেন শুধু পঞ্চায়েতেই এদের ছড়াছড়ি?
পঞ্চায়েত ভোট
Image Credit source: টিভি নাইন বাংলা

Follow Us

কলকাতা: গোঁজ প্রার্থী। ভোটের দামামা বাজতেই বঙ্গভূমে খুব শোনা যাচ্ছে এই শব্দবন্ধ। মনোনয়ন পর্বে অনেকেই গোঁজ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। সাধারণত এই স্থানীয় স্তরের ভোটের ক্ষেত্রে… আরও সহজভাবে বলতে গেলে পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায় গোঁজ প্রার্থী। পুরসভার ভোটের ক্ষেত্রেও কখনও কখনও এমন গোঁজ প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা জিতেও যান। তবে তা সংখ্যায় পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় অনেকটাই কম। আর লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে এমন গোঁজ হওয়ার নজির কার্যত হাতেগোনা।

গোঁজ প্রার্থী কী? কেন পঞ্চায়েতে গোঁজের ছড়াছড়ি?

পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় দেখা যায়, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীকে যিনি ‘অফিশিয়াল’ প্রার্থী, তাঁর বিরুদ্ধে সেই দলেরই অন্য কেউ অন্য কোনও প্রতীকে (নির্দল হিসেবে) ভোটে লড়াই করেন। তখন সেই দ্বিতীয় প্রার্থীকে গোঁজ প্রার্থী হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ, এমন কেউ যিনি ভোটে দলীয় প্রতীক পাননি, কিন্তু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই একটি রাজনৈতিক দল করেন। তিনি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেই, তাঁকেই গোঁজ বলে ধরে নেওয়া হয়।

পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে এই ধরনের গোঁজ প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার প্রবণতা অনেকটা বেশি থাকে। এর মূল কারণ হল, প্রার্থী হতে গেলে কম অর্থ জমা দিতে হয়। এছাড়া একজন মাত্রা প্রস্তাবক হলেই চলে যায়। ফলে ভোট ময়দানে লড়াই করা অনেক সুবিধাজনক হয়ে যায় ওই গোঁজ প্রার্থীর জন্য।

শাসক শিবিরেই কেন গোঁজ বেশি?

শুধু এবারের নির্বাচন নয়, অতীতের ভোটগুলিতেও দেখা গিয়েছে যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দল থেকে গোঁজ প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা অনেকটা বেশি থাকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, যেহেতু পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন দলেরই জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেই কারণে শাসক শিবির থেকেই গোঁজ হওয়ার ট্রেন্ডও বেশি। তা বলে, বিরোধীদের যে একেবারেই থাকে না, এমন নয়। বিরোধীদেরও যথেষ্ট গোঁজ প্রার্থী দেখা যায়। তবে সংখ্যায় শাসকের তুলনায় অনেকটা কম। যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এবারের ভোটেও শাসক শিবির তৃণমূলে যে পরিমাণ গোঁজ রয়েছেন, বিজেপিতে সেই তুলনায় অনেকটাই কম। আবার সিপিএম কিংবা আইএসএফ-এর ক্ষেত্রে আরও কম, নেই বললেই চলে।

ভোটের মাঠে কতটা ছাপ ফেলতে পারে গোঁজরা?

রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, ভোটের ক্ষেত্রে গোঁজরা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা ওই গোঁজ প্রার্থীর এলাকায় কতটা প্রভাব রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ গোটা বিষয়টি নির্ভর করে, কতটা এলাকা গোঁজের হাতে রয়েছে। সেই কারণে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গোঁজরা যতটা প্রভাব বিস্তার করেন, জেলা পরিষদ স্তরে ততটা পারেন না। এলাকার ব্যাপ্তির কারণে, পঞ্চায়েত স্তরে সুবিধা করতে পারলেও জেলা পরিষদ স্তরে সেই প্রভাব ফেলতে পারে না গোঁজরা। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও কখনও কখনও প্রভাব ফেলতে দেখা গিয়েছে গোঁজদের।

গোঁজ কেন দলের মাথাব্যথা?

গোঁজ প্রার্থীদের কোনও দলই ভাল চোখে দেখে না। বলা ভাল, ভোটের সময় দলগুলির একটি অন্যতম মাথাব্যথার কারণ গোঁজ। কারণ, তাঁর দলের অফিশিয়াল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে ভোটে নামছেন। সেক্ষেত্রে, ওই গোঁজ যদি এলাকায় প্রভাবশালী হন, তাহলে দলের অফিশিয়াল প্রার্থী হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যদি গোঁজ নাও জেতেন, সেক্ষেত্রে ভোট কাটাকুটির খেলায় বিরোধী দলের প্রার্থী সুবিধা পেয়ে যেতে পারে। তাছাড়া, যদি এই গোঁজের কারণে দলের অফিশিয়াল প্রার্থী হেরে যান, তাহলে দলীয় নেতৃত্বের উপর অনাস্থা তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তার উপর সংখ্যার নিরিখে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে।

শাসক দল যেমন এবার শুরু থেকেই গোঁজ-কাঁটা সরাতে কড়া পদক্ষেপ করেছে। নিয়ম করে বলে চলেছে, গোঁজ হিসাবে না দাঁড়িয়ে সরে যেতে। না হলে, আর দলে ফেরানো হবে না। কিন্তু তারপরও অনেক জায়গাতেই গোঁজরা রয়েছেন বলেই খবর উঠে আসছে।

গোঁজদের কী সুবিধা হয় এতে?

প্রথমত, ওই গোঁজ যদি স্থানীয় স্তরে প্রভাবশালী হন, তাহলে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েও ভোটে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর সেক্ষেত্রে গোঁজরা জয়ের পরে দলের সঙ্গে বেশি করে দর কষাকষি করার সুযোগ পেয়ে যান। কারণ, তিনি দলের অফিশিয়াল প্রার্থীকে হারিয়েছেন। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের বোর্ড তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় শাসককে। এছাড়া আরও একটি দিক রয়েছে। রাজনৈতিক কারবারিদের ব্যাখ্যা, গোঁজদের অনেকেরই মনোভাব থাকে, প্রথমে নিজেকে জয়ী দেখা। আর যদি জিততে নাও পারে, তাহলে দলের প্রার্থীকে হারিয়ে মজা দেখা। ভাবখানা এমন, দেখ কেমন লাগে, আমায় টিকিট না দেওয়া!

অতীতের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, গোঁজ হিসেবে দাঁড়ানো নির্দলরা অনেকক্ষেত্রে বোর্ড তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এমনকী বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পেয়ে যেতে পারে। আবার এই গোঁজ যেহেতু দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত, তাই জেতার পর প্রয়োজনে দলে টানতেও সুবিধা হয়।

গোঁজ নিয়ে কী ব্যাখ্যা রাজনীতিকদের?

কংগ্রেসের মুখপাত্র ঋজু ঘোষাল বলেন, “গোঁজ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা ভোটের লড়াইয়ে আছি। তৃণমূলকে টক্কর দেব। ওটা তৃণমূলের অন্দরের সমস্যা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নব জোয়ারের মানুষ জন টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকা স্থানীয় অনেকেই টিকিট পাননি। তারাই ভোটে লড়ছেন অন্য প্রতীকে। এটা তৃণমূলের মধ্যে যে ফাটল হয়েছে, তার প্রকাশ।”

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আবার বলছেন, “তৃণমূল জানে ভোট হলে হারবে। তাই ওরা মনোনয়ন তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। ওদের কে গোঁজ হল, কে কী হল জানি না। তবে মানুষ ওদের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। সে কারণেই ওরা আমাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা করছে। ভয় দেখাচ্ছে। বিরোধীদের উপর আক্রমণ করছে। ওদের (তৃণমূলের) পুরনো নেতা অনেকেই তো বলছেন, তাঁদের উপরেও আক্রমন আসছে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার নিয়ে। যাই করুন না কেন, মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে।”

এদিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কাকদ্বীপের সভা থেকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গোঁজ কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়। বলেছেন, যদি কেউ নির্দল হিসেবে দাঁড়ায়, তাহলে তা দলের সঙ্গে বেইমানির সমান এবং তাঁদের আর কোনওভাবেই দলে ফেরত নেওয়া হবে না। স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে কেউ নন।

Next Article