প্রীতম দে
এবার যাত্রা পাড়ার ভিলেন মেছো কার্তিক। এবার কোনও পলিটিক্যাল পালা হচ্ছে না। এবার সরকার শেখাচ্ছে যাত্রা।
প্রতিবছর রথযাত্রার সময় শহরের এই গলিটা রংচংয়ে পোস্টার আর রংচংয়ে নামে সেজে ওঠে। স্বামী কেন আসামি। কাজল লতায় কাল কেউটে। সিঁদুরের মর্ম বোঝে না মেয়েরা। এরকম সব চিত্তাকর্ষক শিরোনাম। এবার যদি নতুন বাজারের পাশ দিয়ে বিকে পালের দিকে যেতে থাকেন তাহলে যাত্রাপালার গলিতে দেখবেন একটা নাম জ্বলজ্বল করছে, সেটা হল যাত্রাপালার নতুন খলনায়ক মেছো কার্তিকের আগমন।
মেছো কার্তিককে মঞ্চে নিয়ে আসছেন নেপাল সরকার। তিনি বহু আগে থেকেই বিভিন্ন নতুন নতুন ভিলেনের জন্ম দিয়েছেন আর যাত্রাকে হিট করেছেন বলে শোনা যায়। গুরু মানেন উৎপল দত্তকে। একসময় শিয়ালদায় চালচুলোহীন নেপাল সরকার যাত্রা পাড়ার ডন বলতে পারেন। বহু হিট যাত্রাপালার জন্মদাতা। কাঞ্চন মল্লিক থেকে শুরু করে আরও অনেক তাবড় তাবড় সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীকে যাত্রার মঞ্চে পরিচালনা করেছেন। নতুন নতুন ভিলেন তৈরি করে চমক দিয়ে যাত্রা সুপার ডুপার করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। যাত্রা সমিতির সম্পাদক কনক ভট্টাচার্য হাসতে হাসতে বললেন, “নেপাল সরকার এক পিসই আছে যাত্রা পাড়ায়। সেবার কোনও কিছুই ঠিক করা যাচ্ছিল না। তেমন বড় কোনও স্টার নেই। বাজেট নেই। নেপাল পেল একজন চাইনিজকে। বলল এই হবে এবারের স্টার।” ঘুরতেন। “উৎপল বাবু বলেছিলেন তুই ডিরেক্টর হবি” দু’কানে হাত ঠেকিয়ে গুরুকে স্মরণ করে বললেন নেপাল সরকার।
লাভেরিয়া বইতে ভিলেন হয়েছিলেন মেছো কার্তিক। আসল নাম রাজা দত্ত। কিন্তু ওই নামে কেউ চিনবে না। মেছো কার্তিক বললে এক ডাকে সবাই চেনে। যাত্রাকে হিট করাতে তাই সেই মেছো কার্তিককে যাত্রায় আনলেন নেপাল। কাগজে বড় বড় করে বিজ্ঞাপনও বেরিয়েছে। আসিতেছে আসিতেছে আসিতেছে মেছো কার্তিক।
প্রথমে ছিল সোনার থালা। তারপর হল কাঁসার থালা। এখন ইট অ্যান্ড থ্রো। খাও আর ফেলে দাও। উত্তর কলকাতার নতুন বাজারের পর পুরনো যাত্রা পাড়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কুল ওরিয়েন্টাল সেমিনারির আশেপাশে রঙিন পোস্টারে ছয়লাপ। গোধূলি বেলার শেষ দেখা। গ্রাম বাংলার দামাল ছেলে। শেষ রাতের সঙ্গী। মেম সাহেবের মালাবদল। এরাও শত্রু।
রবিনা ট্যান্ডনকে যাত্রায় নামিয়েছেন। তাপস পাল, শতাব্দী রায় ১১ বছর ধরে যাত্রা করেছেন। রচনা ব্যানার্জির যাত্রায় হাতেখড়ি তাঁর কাছেই। কনক ভট্টাচার্যের তিনটি অপেরা। সবই দীপ দিয়ে। রত্ন দীপ, সন্ধ্যাদীপ, স্বর্ণদীপ অপেরা। “কথা দিয়েছিলাম আনব। এনেছিলাম রবিনা ট্যান্ডনকে। রূপ সাগরের রূপসী। বহরমপুরে শো হল। চাঁচলে প্যান্ডেলটাই লুট হয়ে গেল। আসার কথা ছিল কাদের খানের মত অভিনেতাদের। এখন তো আগেকার কেউই আর করছেন না। কনক ভট্টাচার্যের রত্নদীপ অপেরা। তাপস শতাব্দী জুটির যাত্রার জন্য বিখ্যাত। একটা সময় ছিল যখন গ্রাম বাংলা কাঁপিয়েছে তাপস-শতাব্দীর যাত্রাপালা। তারপর তাপস পাল মারা গেলেন। শতাব্দী রায় তারপর আর উৎসাহ পেলেন না যাত্রার ব্যাপারে। আর করেননি তা নয়। করেছেন। হাতে গোনা। এবারে যাত্রার মঞ্চে নেই তিনি।”, বললেন কনক ভট্টাচার্য।
আনন্দবীণা অপেরার বোম্বাই কা বিবি, সন্ধ্যা দীপ অপেরার কাজল লতায় কাল কেউটে। কতদিন দেখিনি তোমায়। আমি সিংহ বাড়ির রাঙা বউ। এই দুটি পালা এবার নামিয়েছেন কনক ভট্টাচার্য। তাঁর দুটি অপেরা থেকে। “সরকারি সহযোগিতা যাত্রাকে ধরে রাখতে একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। যাত্রার ওয়ার্কশপ হচ্ছে। ৫০ জন করে ছেলেমেয়েকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তাদের সুযোগ দেওয়া হবে যাত্রায়। আর একটা শেষ খবর। এবারে কোনও পলিটিক্যাল পালা না থাকলেও হয়তো ২০২৬-এর দিকে তাকিয়ে খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক যাত্রাপালা আবার দেখা যাবে।” মুচকি হেসে জানালেন যাত্রা সমিতির সম্পাদক।