কলকাতা: ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল হওয়া সত্ত্বেও বাংলার মাটিতে যে তৃণমূল-সিপিএম-এর কোনও সখ্য নেই, সে কথা বারে বারেই বুঝিয়ে দিয়েছে দুই দল। বিজেপি বিরোধিতায় সুর মিললেও, একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতেই অভ্যস্ত। তবে মহুয়া-বিতর্কে যেন উলটপুরাণ! বিতর্কের পর সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেলেও শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে শোনা যাচ্ছে না মহুয়ার নাম। সাংসদের ঘুষ-বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে, তৃণমূল নেতারাও খুব চাঁচাছোলা উত্তর দিচ্ছেন না। তবে সিপিএম বলছে অন্য কথা। পরোক্ষভাবে মহুয়াকে সমর্থনের সুর শোনা যাচ্ছে সুজন-সেলিমদের গলায়।
তৃণমূল যখন চুপ, তখন বিরোধীরা আরও একবার বিজেপির সঙ্গে ঘাসফুল শিবিরের আঁতাত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছে, তৃণমূল সাংসদের হয়ে মুখ খুলে নিজেদের বিজেপি-বিরোধী অবস্থান কি আরও স্পষ্ট করতে চাইছে সিপিএম? আবার এই প্রশ্নও উঠছে যে মহুয়া-বিতর্কের মতো একটা জাতীয় স্তরের ইস্যুকে সামনে রেখে সিপিএম কি প্রমাণ করতে চাইছে যে শরিক দলের সঙ্গে তাঁদের ভেদাভেদ নেই?
আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে মহুয়া নাকি দুবাই-এর ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ২ কোটি টাকা ও একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়েছিলেন। এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। সামনে এসেছে মহুয়ার প্রাক্তন প্রেমিক আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাই-এর অভিযোগও। বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে লোকসভার এথিক্স কমিটির বৈঠক রয়েছে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, আগে এথিক্স কমিটির সামনে নিজেকে প্রমাণ করুন মহুয়া, পরে সিদ্ধান্ত নেবে দল। তিনি বলেন, “দল চায়, সাংসদকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। লোকসভার সংশ্লিষ্ট ফোরাম প্রথমে তদন্ত করুক, তারপর দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে।” তৃণমূলের আর এক নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি শুধু বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।” তাঁর কথা থেকে কার্যত স্পষ্ট হয়নি কিছুই।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা ঠিক যে বিজেপির বিরুদ্ধে বা আদানির বিরুদ্ধে তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা যে কথা বলেন না, তেমন কিছু কথা মহুয়া মৈত্র বলেছেন। এই কারণে বিজেপির বাড়তি কোনও রাগ থাকতে পারে, তবে তার প্রতিফলন হওয়া উচিত নয়।” মহম্মদ সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন, আদানির নামে যে প্রশ্ন করবে, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে কেন? তিনি বলেন, “যে এথিক্স কমিটি ১০ বছর ধরে ঘুমোচ্ছিল, মহুয়া ইস্যুতে রাতারাতি সেই এথিক্স কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। অভিযোগ দেখলে বোঝা যাবে এটা ‘স্পনসরড বাই’ আদানি।” তবে, ঘাসফুল শিবিরের নীরবতা নিয়েও অবশ্য মুখ খুলেছেন সেলিম। তাঁর প্রশ্ন, কেন এই ইস্যুতে একটাও কথা বলছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?