কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়ার জন্য তৈরি তৃণমূল। বাংলায় শাসক দল হিসেবে জমিও শক্ত ঘাসফুল শিবিরের। সেই জমিতে পদ্ম ফোটাতে কারা ভূমিকা নিতে পারে, কারা সামনে থাকলে মানুষ ভরসা করবে, কারা পারবে সংগঠনের রাশ শক্ত রাখতে- সেই হিসেব কষার কাজ শুরু করে ফেলল গেরুয়া শিবির। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার উপস্থিতিতে শহরে যে বৈঠক হয়ে গেল, তাতে এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সে কারণেই কি বাছাই করা কয়েকজনের সঙ্গেই কথা বললেন শাহ?
প্রাক্তন ‘পথ’ দেখিয়েছিলেন, বর্তমানের কাঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব
এ রাজ্যের বিজেপির সংগঠন দীর্ঘদিনের। তবে বাংলার রাজনীতিতে বিজেপি গুরুত্ব পেয়েছে বছর কয়েক ধরে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ২টি আসন জিতেছিল বিজেপি। ৫ বছর পরই সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮। বিজেপির সেই উত্থানের সময় রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, দিলীপের চাঁছাছোলা বক্তব্য উজ্জীবিত করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। তাঁর মেঠো কথায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। একাধিকবার তাঁর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। কিন্তু, তা নিয়ে মাথা ঘামাননি দিলীপ। তিনি নিজের মতোই থেকেছেন। দিলীপ নিজে মেদিনীপুরের সাংসদ। তার আগে বিধায়কও থেকেছেন। জেলায় জেলায় ঘুরে জনসংযোগে জোর দেন। রাজ্যে বিজেপির সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধিতে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলে রাজ্য সভাপতির পদ গেলেও ভোট বৈতরণী পেরতে দিলীপে ভরসা রাখছেন অমিত শাহ-নাড্ডারা।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও আসনসংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৭৭ হয়। বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস পর রাজ্য সভাপতি বদল করে বিজেপি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দিলীপের জায়গায় ওই পদে আনা হয় বালুরঘাটের অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদারকে। অনেক সময়েই দিলীপ-সুকান্ত বিরোধ নিয়ে চর্চা হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে ভোটের রণকৌশল তৈরির সময় দেখা গেল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দুই নেতাকেই। নির্বাচনী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, দিলীপ তাঁর মতো দলের সংগঠন বাড়িয়েছেন। অধ্যাপক সুকান্তও নিজের মতো করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগাতার সরব হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গীতাপাঠের কর্মসূচি উপলক্ষে তাঁর একটি মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। সেসবকে অবশ্য পাত্তা দিচ্ছেন না বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি। লোকসভা নির্বাচনে অমিত শাহর দেওয়া টার্গেট পূরণই যে পাখির চোখ, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য সভাপতিকে সামনে রেখেই তাই এগিয়ে যেতে চায় গেরুয়া শিবির।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতার উপর ভরসা
এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির মুখ বলে যাঁদের চিহ্নিত করা হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শুভেন্দু অধিকারী। একটা বড় সময় ধরে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার তৃণমূলে কেটেছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। আর নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়ে হারিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূলকে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে হঠানো যে তাঁর লক্ষ্য, একাধিকবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এই কয়েক বছরেই তাঁকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটাই প্রমাণ হয়ে গেল শাহী-বৈঠকে। শুধু নির্বাচনী কমিটিতে জায়গা পেলেন তাই নয়, যে চার নেতাকে আলাদাভাবে ঘরে ডেকে বৈঠক করলেন শাহ-নাড্ডা, তাঁদের মধ্যেও জায়গা পেলেন শুভেন্দু।
ভোটে না জিতলেও রাহুলে ভরসা
আরও এক নেতার নাম উল্লেখ করতে হয়, তিনি রাহুল সিনহা। ভোটে জেতার কোনও রেকর্ড তাঁর ঝুলিতে নেই। একসময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যই বোধহয়, তাঁকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন অমিত শাহ। এছাড়া রয়েছেন অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁকে নিয়ে গত কয়েক বছরে বিতর্ক হয়েছে অনেক। দলীয় নেতাদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এদিন শাহের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জায়গা পেয়েছেন তিনিও। এই টিমকে সামনে রেখেই ঘাসফুলকে পরাস্ত করতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব।