RG Kar: সন্দীপের দিকে আঙুল উঠতে ‘নিল ডাউন’ করিয়ে রেখেছিলেন! ‘ঘরের ছেলে’ সেই আশিস পাণ্ডের পরিচয় কী?

Ashish Pandey: শোনা যায়, সন্দীপ ক্ষমতায় ফেরার পর আন্দোলনকারীদের উপর কার্যত 'খড়গহস্ত' হয়ে উঠেছিলেন আশিস পাণ্ডে। ২০ জনকে হস্টেলে একটানা KNEEL DOWN (হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা) করিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে আশিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, আশিসের মুখে শোনা যেত ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি।

RG Kar: সন্দীপের দিকে আঙুল উঠতে 'নিল ডাউন' করিয়ে রেখেছিলেন! 'ঘরের ছেলে' সেই আশিস পাণ্ডের পরিচয় কী?
আশিস পাণ্ডেImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 04, 2024 | 2:04 PM

কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ আশিস পাণ্ডেকে। জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট অর্থাৎ আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হওয়ার দিন সেমিনার রুমের কাছেই দেখা গিয়েছিল আশিসকে। আরজি করের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন এই আশিস পাণ্ডে। তবে সন্দীপ ঘনিষ্ঠতা যে ঠিক কতটা ছিল, সে সব কাহিনী শোনা যায় আরজি করের অন্দরে।

২০১৭ সালে এমবিবিএস-এর ছাত্র হিসেবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন আশিস। ২০২২-২৩ সালে ইন্টার্নশিপ হয় তাঁর। এরপর আরজি করেই হাউস স্টাফ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

আরজি করে কান পাতলেই শোনা যায়, গত ছ’বছরে সন্দীপ ঘোষের বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে আরজি করে ইউনিট তৈরি হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। শাসকদলের ছাত্র ইউনিটের প্রেসিডেন্ট হন আশিস পাণ্ডে।

এই খবরটিও পড়ুন

অভিযোগ, দুর্নীতির যে মডেল তৈরি হয়েছিল আরজি করে, সেখানে সন্দীপ ঘোষের অনুগামী হিসেবে কাজ করতেন ‘প্রভাবশালী’ ছাত্রনেতা আশিস। এই আশিসদের সঙ্গে নিয়েই নাকি নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন সন্দীপ। সেই ব্যবস্থার বিরোধিতায় ২০২৩ সালে চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে আরজি কর। সন্দীপ ঘোষের সমর্থনে পাল্টা আসরে নামেন আশিস পাণ্ডেরা। ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় সন্দীপ ঘোষ বদলি হন ঠিক‌ই তবে এক মাসের মধ্যেই আবার আরজি করের অধ্যক্ষ‌ পদে ফিরে পেয়েছিলেন তিনি।

শোনা যায়, সন্দীপ ক্ষমতায় ফেরার পর আন্দোলনকারীদের উপর কার্যত ‘খড়গহস্ত’ হয়ে উঠেছিলেন আশিস পাণ্ডে। ২০ জনকে হস্টেলে একটানা KNEEL DOWN (হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা) করিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে আশিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, আশিসের মুখে শোনা যেত ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি।

চিকিৎসক নীলাঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, সন্দীপ ঘোষ অধ্যক্ষ থাকাকালীন তাঁর ঘরে প্রবেশ করতে পারতেন না সবাই। তবে আশিস পাণ্ডেদের প্রবেশ ছিল অবাধ। তাঁরা অধ্যক্ষের ঘরেই বসে থাকতেন প্রায়ই। আশিসের একসময়ের অধ্যাপক নীলাঞ্জন ঘোষও জানিয়েছেন, সন্দীপের বিরোধিতা করলে এই আশিসদের থ্রেট সিন্ডিকেটের কোপে পড়তে হত ছাত্রদের। জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতও জানিয়েছেন, আরজি করে সন্দীপ ঘোষের নির্দেশ কার্যকর করতেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই আশিস পাণ্ডে। 

আইএম‌এস হস্টেলের পড়ুয়া আশিসের অবাধ প্রবেশ ছিল মেডিক্যাল কলেজের সর্বত্র। হস্টেলের আনাচে-কানাচে পার্টির আসর বসত আশিসদের‌ই তত্ত্বাবধানে! চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গে বদলির হুমকি পর্যন্ত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর এসবে কোনও রাখঢাক ছিল না। সবটাই চলত প্রকাশ্যে।

তিলোত্তমার খুন-ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর অন্য মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়ারা আরজি করের অ্যানাটমি বিভাগে অডিটোরিয়ামে জিবি ডেকেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অডিটোরিয়ামের আলো নিভিয়ে আশিসের নেতৃত্বেই অন্য মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হয়েছিল সন্দীপ ঘোষের বাহিনী।

বছরখানেক আগে আরজি কর থেকে বদলি হ‌ওয়ার পর স্বাস্থ্য ভবনের ইনস্টিটিউট অব ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারে বসতেন সন্দীপ ঘোষ। সেই সময় সন্দীপের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রতিদিন হাজির হতেন আশিস পাণ্ডে। হাসপাতালের গাড়িতে সন্দীপ ঘোষের চেয়ে পাঠানো ফাইল নিয়ে যেতেন আশিস‌ই। এমনকী, তিলোত্তমার ঘটনার পর সন্দীপ ঘোষ যেদিন স্বাস্থ্য ভবনে ইস্তফা দিতে যান সেদিন‌ও হাসপাতালের গাড়িতে পাশে থাকার বার্তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন পৌঁছে গিয়েছিলেন আশিস পাণ্ডে সহ কয়েকজন।

৯ আগস্ট সুদীপ্ত রায়ের একটা ফোনেই সন্দীপ ঘোষের পাশে দাঁড়াতে শিয়ালদহ থেকে ক্যাব নিয়ে আরজি করে পৌঁছে গিয়েছিলেন ‘মিস্টার পাণ্ডে’। এই সকল ঘটনাক্রমই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, সন্দীপের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। এরই মধ্যে দুর্নীতির প্রমাণ চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে আশিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সেখানে সদুত্তর নাম মেলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।