কলকাতা: গত কয়েকদিন ধরে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তাররা বারবার অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর নাকি দেখাই পাওয়া যাচ্ছিল না অধ্য়ক্ষের। চাপের মুখে সোমবার সকালে অধ্য়ক্ষ পদ ছাড়লেন সেই সন্দীপ ঘোষ। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের মৃত্যু ঘিরে যখন কার্যত গোটা দেশ উত্তাল, তখন ঘটনার চারদিন পর সন্দীপ ঘোষ বললেন, মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে বাবা হিসেবে পদত্য়াগ করলেন তিনি। পদত্যাগ করার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারবার উচ্চারণ করলেন ‘তিলোত্তমা’র আসল নাম। শেষ লগ্নেও পিছু ছাড়ল না বিতর্ক। গত কয়েক বছরে এই সন্দীপ ঘোষের নাম জড়িয়েছে একের পর এক বিতর্কে।
কে এই সন্দীপ ঘোষ?
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেই প্রথমবার অধ্যক্ষ পদ পান সন্দীপ ঘোষ। আর আগে দুটি মেডিক্যাল কলেজের এমএসিপি পদে ছিলেন তিনি। সন্দীপ ঘোষ অর্থোপেডিক সার্জেন অর্থাৎ অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ। আর জি করের পদ পাওয়ার আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ছিলেন তিনি। সোমবার স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এসেছেন তিনি। ২০২০ সালে থেকে আরজি করের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন সন্দীপ ঘোষ।
টেন্ডার নিয়ে অনিয়ম! আদালতে পৌঁছয় দুর্নীতির মামলা
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গত মার্চ মাসের ঘটনা। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে এই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেই রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত। টেন্ডারের ক্ষেত্রে অনিয়ম সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর নামে টালা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। তারও আগে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি।
বর্জ্য পদার্থ পাচার হত বাংলাদেশে!
আরজিকর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বর্জ্য বা ‘মেডিক্যাল ওয়েস্ট’ কোটি-কোটি টাকায় পাচার করা হত বাংলাদেশে! সন্দীপ ঘোষের আমলে এমনই অভিযোগ উঠেছিল আর জি কর হাসপাতালে। জানা যায়, বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ছিল। সেই সংস্থার তরফেও অভিযোগ করা হয়েছিল যে হাসপাতাল থেকে অনেক চিকিৎসা বর্জ্য তাঁরা পাচ্ছেন না। যার মধ্যে ছিল ব্য়বহার করা স্যালাইনের বোতল, তার, সিরিঞ্জ, গ্লাভস ইত্যাদি।
চেয়ার থেকে সন্দীপ ঘোষকে নড়ানোই যেত না!
কর্মজীবনে এটাই ছিল সন্দীপ ঘোষের প্রথমবার প্রিন্সিপ্যাল হওয়া। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কেরিয়ারে প্রথমবারই প্রিন্সিপ্যাল হয়েছিলেন আরজি করের মতো রাজ্যের প্রথম সারির একটি সরকারি হাসপাতালে। আর চেয়ারে বসার পর তাঁকে সরানোই যেত না! স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, নতুন প্রিন্সিপ্যালের নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, তারপরও সরানো যায়নি সন্দীপ ঘোষকে। কোন যাদুবলে বদলে গিয়েছিল সিদ্ধান্ত?
তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে এই সন্দীপ ঘোষের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে আসে। আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন শান্তনু সেন। তিনি নাকি সন্দীপ ঘোষকে চেয়ার থেকে সরানোর ব্যবস্থা করেছিলেন! কিন্তু অধ্যক্ষ সরেননি। পরে শান্তনু ওই পদ থেকে সরে যান।