কলকাতা: ট্রামের পর এবার চিন্তার মেঘ ক্রমশ ঘন হচ্ছে হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে। কলকাতার আইকন বলতে যে সমস্ত বোঝানো হয়ে থাকে, সেই তালিকায় একদম প্রথম সারিতে রয়েছে এই হলুদ ট্যাক্সি। অথচ তাই এবার কলকাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। হলুদ ট্যাক্সি যাতে বাঁচানো যায়, তার জন্য ইতিমধ্যেই আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। ‘হারানো সুরে হলুদ ট্যাক্সি’ শীর্ষক আলোচনা সভাও হয়ে গেল কলকাতা প্রেস ক্লাবে।
প্রসঙ্গত, মার্চের গোড়া থেকেই শহর থেকে উঠে যেতে চলেছে প্রায় আড়াই হাজার হলুদ ট্যাক্সি। বয়সের ভারে চলে যেতে চলেছে বাতিলের খাতায়। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই মঙ্গলবার বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে বৈঠক করেন সব ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষকর্তারা। কীভাবে উত্তরণের পথ খোলা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়। এরইমধ্যে এদিন প্রেস ক্লাবের আলোচনায় মূল বক্তা হিসাবে ছিলেন রাজনীতিবিদ শতরূপ ঘোষ, আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যপালের এডিসি শান্তি দাস, অ্যাডভাইজার সৌম্য মহাপাত্র, অভিনেতা সুজয় রুদ্র, আবৃত্তিকার ঝর্ণা ভট্টাচার্য, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অর্থ সচিব সদানন্দ মুখোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
আলোচনা চলাকালীন দেখা গেল বক্তারা প্রায় সকলেই বারবার ফিরে ফিরে গেলেন স্মৃতির পাতায়। সকলেই ভাসলেন নস্টালজিয়ার দোলায়। কেন আজ এই অবস্থা সেই ব্যখ্যাও দিতে দেখা গেল কিছুজনকে। কেউ আবার দুষলেন রাজ্য সরকারকে। কারও কারও মতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা-অদূরদর্শিতার জন্যই আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে হলুদ ট্যাক্সি। তবে নো রিফিউজাল লিখে রেখেও যে হারে বিগত কয়েক বছরে হলুক ট্যাক্সির চালকেরা যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছেন, দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া চেয়েছেন, যেভাবে যাত্রীদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের মাত্রা বেড়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক বক্তা। উঠে এল নানা মত।
আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় তো বলছেন, “হলুদ ট্যাক্সি চালকদের কাছে মানুষ আর যেতে চায় না। হাতে ফোন থাকলেই অ্যাপের মাধ্যমে ট্যাক্সি বুক হয়ে যায়। সেই বেসরকারি অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সিগুলোকে নিয়েও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাড়ির সামনে পাওয়া যায় সেই ট্যাক্সি। তাতে অনেক সুবিধা হয়। এদিকে রাতে যদি প্রয়োজন হয় তখন হলুদ ট্যাক্সির চালকদের বারবার আবেদন করা হলেও চালকরা যেতে চান না।” শতরূপ ঘোষ আবার দুষলেন রাজ্য সরকারকেই। বললেন, “রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক অদূরদর্শিতার জন্য হলুদ ট্যাক্সি চালকরা বিপাকে পড়েছেন। তবে এটাও ঠিক যে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখনই হলুদ ট্যাক্সিগুলি মানুষের আর খুব প্রয়োজনে লাগে না।”
রাজ্যপালের এডিসি শান্তি দাস আবার বলেন, “তিনি যখন পুলিশ হিসাবে রাজ্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ট্যাক্সি নিয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশেষ করে যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে। কালের আবহে এখন হলুদ ট্যাক্সি ধুঁকছে। অ্যাম্বাসেডর এখন আর তৈরি হয় না।” তাঁর মতে, পরিবেশ দূষণ করে পুরনো দিনের গাড়ি চালানোও উচিত নয়। মানুষের কাছে নস্টালজিক হলেও এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তাই বাতিল হওয়ায় ভুল কিছু দেখছেন না তিনি।