কলকাতা: কলকাতা পৌরসভার পরিকল্পনার অভাব নাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে টানাপোড়েন? নিউমার্কেটের সংস্কার বন্ধ হতেই উঠছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন। ঐতিহ্যশালী নিউমার্কেটের বিভিন্ন অংশ ক্রমশ ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ছে। দিকে দিকে খসে পড়ছে চাঙর। ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা, প্রত্যেকেই মার্কেটের অবস্থা দেখে আতঙ্কিত।
এদিকে নিউমার্কেটের পুরনো অংশে রয়েছে ৫১০ দোকানদার। নতুন অংশে ৪৯৯ জন দোকানদার। কলকাতা পুরসভার অধীনে থাকা এই ঐতিহ্যশালী নিউমার্কেট সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। যাদবপুরের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সোম গোটা বিষয়টির দায়িত্ব রয়েছেন। নিউমার্কেটে সংস্কার নিয়ে ইতিমধ্যে রিপোর্ট জমা করেছেন তিনি। কোন রাস্তায় সংস্কারের কাজ হতে পারে তাই বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।
ভূমিকম্পের হাত থেকে নিউমার্কেটকে বাঁচানোর জন্য গোটা মার্কেটের চারপাশে ‘ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যান্ড’ বসাতে হবে। এছাড়াও একাধিক কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। নিউ মার্কেটে পুরোনো ভিতের পাশাপাশি টাইবিম এবং ‘সিসমিক ওয়াল’ নির্মাণ করে ভূমিকম্পে যতটা সম্ভব ক্ষতি এড়ানো যায়, সেই পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কিন্তু, এই কাজ করতে গেলে বেশ কিছু দোকানদারকে অন্যত্র পাঠাতে হবে। এখানেই তৈরি হয়েছে জটিলতা।
এখনও পিছু ছাড়েনি বর্ণপরিচয় মার্কেটের আতঙ্ক
বাম আমলে কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করার জন্য বর্ণপরিচয় মার্কেট নামে একটি বড় নির্মাণ তৈরি করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখানে ব্যবসায়ীরা স্থান পাননি বলে অভিযোগ। এমনকি এই বর্ণপরিচয় মার্কেট নিয়ে প্রচুর মামলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন নিজেদেরকে জায়গা হারিয়ে রীতিমতো চাপে পড়েছেন। সেই ভয় তাড়া করছে নিউমার্কেটেও। ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটের অবস্থা খারাপ ঠিকই। কিন্তু যে দোকানদারকে যেখান থেকে তোলা হবে, সেখানেই তাদেরকে বসাতে পারবে পুরসভা, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে রুটি রোজগার হারাতে হবে, এই আতঙ্কে দোকানদাররা সরতে নারাজ।
এদিকে কলকাতা পৌরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের যে কোনও কাজ পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে পারে, তা নিয়ে আদৌ এস এস হগ মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে জানায়নি পুর কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিস্তারিত যে প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর রয়েছে, তাতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। যে কারণে মাঝপথে শুধুমাত্র ভেঙে পড়া অংশগুলিতে ক্ল্যাম্প বসিয়েই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিষয়টি নিয়ে বারবার বৈঠক হলেও, কোন সমাধান সূত্র বের হয়নি। পুরসভার বাজার বিভাগের মধ্যেই রয়েছে এই সংস্কারের কাজ নিয়ে মতানৈক্য। কিন্তু, তারপরেও পুরসভা এভাবে পরিকল্পনাহীনভাবে সংস্কারের কাজে কেন নামল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কী বলছে ইতিহাস?
১৮৭৪ সালের ১ জানুয়ারি। দেড়শো বছর আগে পথ চলা শুরু করেছিল নিউ মার্কেট। শোনা যায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী কলকাতায় এমন বড় মার্কেট তৈরিই হতো না, যদি না তৎকালীন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান স্যর স্টুয়ার্ট হগ উদ্যোগী না-হতেন। সেই অবদান মাথায় রেখেই ১৯০৩ সালে মার্কেটের নাম হয় এস. এস. হগ মার্কেট। এখন দেড় শতকের বোঝা বয়ে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সেই নিউ মার্কেটের ভিত। কলকাতা পুরসভার বাজার বিভাগ সূত্রে বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে, নিউ মার্কেটের সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ২৬ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু, সংস্কারের রাস্তা শেষ পর্যন্ত কতটা প্রশস্ত হয় সেটাই দেখার।