কলকাতা: হতে পারে তিনি কোনও মন্ত্রী বা সাংসদ বা বিধায়ক নন। হতে পারে তিনি একজন জেলার তৃণমূল নেতা। তবু রাজ্য রাজনীতিতে তিনি বরাবরই ‘হেভিওয়েট’ বলেই পরিচিত। বারবার শিরোনামে জায়গা করে নেওয়া সেই অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) মঙ্গলবার দিনভর রইলেন ‘লাইমলাইটে’। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পরও নাটক জারি রইল সেই অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে। রাত প্রায় ২ টো পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়ে নিলেন তিনি। রাত ১২ টার পর শুনানি হল খোদ বিচারকের বাড়িতে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের সেই টানটান নাটকের পর প্রশ্ন উঠছে, এমনটা করার কি খুব দরকার ছিল? একটা রাত অপেক্ষা করলে কী এমন অসুবিধা হত?
এভাবে বিচারকের বাড়িতে ডেকে শুনানি তো কোনও গড়পড়তা ব্যাপার নয়। তবে কি অনুব্রত বলেই? আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বিষয়টা তেমন নয়। শুনানির গুরুত্ব বুঝে, নিয়ম মেনেই শুনানি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বর্ষীয়ান আইনজীবীরা। এদিন এই রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের সেই শুনানি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিচারক এমনটা করতেই পারেন, নিশ্চয় হাতে বেশি সময় ছিল না।’
শুধু অনুব্রত বলেই যে এমন শুনানি, তা মানতে নারাজ বর্ষীয়ান আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ও। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট উভয় ক্ষেত্রেই নিয়ম আছে, প্রয়োজনে রাস্তাতেও কোর্ট বসানো যায়। তাই বিচারক রাকেশ কুমার ঠিকই করেছেন বলেই মত তাঁর।
হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে শুনানির জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আইনজীবী মহলের মতে, দ্রুততার সঙ্গে যদি শুনানি না শুরু করা হত, তাহলে প্রশ্ন তুলতে পারতেন অনুব্রতর আইনজীবীরা। কোনও ফাঁক যাতে না থাকে, সে কারণেই মধ্যরাতে শুনানি বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রথমে ভার্চুয়ালি অনুব্রতকে আদালতে পেশ করা হয়। সেই শুনানি চলাকালীন সশরীরে হাজিরার আর্জি জানান অনুব্রতর আইনজীবী মুদিত জৈন। এরপরই বিচারক সোজাসুজি বলেন, ‘আপনারা কি অভিযুক্তকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসতে চান, তাহলে চলে আসুন।’ এ কথা শুনে রাজি হয়ে যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। আধ ঘণ্টা পর ইডি আধিকারিকরা অনুব্রতকে নিয়ে রওনা হন। তারপর রাত ১ টা ৪০ পর্যন্ত বিচারকের বাসভবনেই চলে শুনানি। কেন এভাবে বাড়িতে ডাকলেন বিচারক? আইনজীবী মহলের মতে, এই ঘটনায় বিচারকের স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন থাকুক, সম্ভবত চাননি তিনি।