কলকাতা: সরকারি কলেজে এখনও কেন ফাঁকা হাজার হাজার আসন। এ খবর নিয়েই বিগত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় বাংলার শিক্ষা মহল। তবে কী বাংলার কলেজে ভর্তিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে? নাকি নিয়োগ দুর্নীতির প্রভাব কি তবে উচ্চশিক্ষাতেও? পরিসংখ্যান বলছে, বেশিরভাগ সরকারি কলেজে বিজ্ঞানের স্নাতকের আসন এখনও ৫০ শতাংশের বেশি ফাঁকা। তাহলে কী প্রথাগত শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে পড়ুয়ারা? শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় কি স্নাতক-স্নাতকোত্তরে আগ্রহ নেই পড়ুয়াদের? তাই কি বারবার পোর্টাল খুলেও পড়ুয়া পাচ্ছে না বাংলার সরকারি কলেজ? কলেজে-কলেজে আসন ফাঁকা থাকায় উদ্বিগ্ন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও। উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদেরাও।
শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকারের আশঙ্কা, ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে শেষ হয়ে গেলেও কয়েক লক্ষ আসন ফাঁকা থেকে যাবে। টিভি-৯ বাংলার মুখোমুখি হয়ে এদিন তিনি বলেন, “বহু কলেজেই আসন এখনও ফাঁকা। তবে আমার ধারণা, ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কয়েক লক্ষ আসন ফাঁকা থাকবে। এ রাজ্যে ২০১৪ সালের পর থেকে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য ধাপে ধাপে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু, তারপর থেকে উচ্চমাধ্য়মিকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অন্যদিকে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য যে আসন বরাদ্দ রয়েছে তা চাহিদার থেকে অনেকটা বেশি। অন্যদিকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ নিয়ে যে সমস্ত পড়ুয়ারা এ রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করছেন তাদের একটা বড় অংশ আবার ইঞ্জিনিয়রিং পড়ার জন্য বহু বেসরকারি কলেজে চলে যাচ্ছে। ফলে সরকারি কলেজে ছাত্র অনেকটাই কম পাওয়া যাচ্ছে।”
তাঁর আরও দাবি, উচ্চমাধ্যমিকের উচ্চশিক্ষা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে একটা বড় অংশের পড়ুয়া। কাজের খোঁজে চলে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে। দেবাশিসবাবু বলছেন, “উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বহু ছেলেমেয়ে আর পড়াশোনার মধ্যে আসছে না। সংখ্যাটা হাজার থেকে লাখে। পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য়রাজ্যে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে একটা বড় ড্রপ আউট হচ্ছে। এটা খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার। অন্যদিকে আবার যাঁরা তুলনামূলভাবে ভাল পড়াশোনায়, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল, তাঁরা আবার এ রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্য এমনকী বিদেশেও পড়াশোনা করতে চলে যাচ্ছে।”
এজেসি বোস কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, “কিছু কিছু বিষয়ে ছাত্রভর্তির সংখ্যা ভাল। আবার কিছু বিষয়ে ছাত্রভর্তির সংখ্যা একেবারে কম। বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে ছাত্রভর্তির সংখ্যা কম। দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়েছে। ৭৫ শতাংশ আসন ফাঁকা রয়েছে। এই আসনগুলি ফাঁকা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যত আবেদন জমা পড়েছিল, তার দশ শতাংশ অ্যাডমিশন নিয়েছে। আমার মনে হয়, বিজ্ঞানের ছাত্রদের অন্যান্য দিকে যাওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। আবার কমার্সের বিষয়গুলিতে ছাত্রভর্তির সংখ্যা বেশি। ৭০-৮০ শতাংশ আসন ভর্তি হয়ে গিয়েছে। আর্টসের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে প্রায় ১০০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর্টসের ছাত্ররা মূলত স্কুল শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্য নেয়। কিন্তু, বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার জন্য বিগত কয়েক বছর নিয়োগ হচ্ছে না। সেজন্য ছাত্ররা প্রফেশনাল কোর্স কিংবা ডিপ্লোমার দিকে ঝুঁকছে।”