কমলেশ চৌধুরী: পর পর দুটো বছরের মধ্যে বর্ষায় কী তফাত!
নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তে বলীয়ান বর্ষায় গত বছর জুনে ৪৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি পেয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ। এবার? জুন-শেষে ঘাটতি ৪৯ শতাংশ। কলকাতাতেও তার অন্যথা হয়নি। গত জুনে ৩৯৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। জুনের শুরুতেই ঘোর বর্ষার মুখোমুখি হয়েছিল মহানগর। ১৪ জুন থেকে ২০ জুন- সাত দিনে মাত্র ২ ঘণ্টার উজ্জ্বল রোদ পেয়েছিল কলকাতা। এ বার এখনও চড়া রোদের হাত থেকে রেহাই নেই।
গতবারের তুলনায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, মাত্র ১১৫.৮ মিলিমিটার। মহানগরে ঘাটতি ৫৯ শতাংশ। ফল? শুখা রেকর্ডের খাতায় নাম তুলেছে ২২-এর জুন। ১৩ বছরে দ্বিতীয় শুষ্কতম জুন দক্ষিণবঙ্গে। একই রেকর্ডে নাম রয়েছে কলকাতারও। গত ১৩ বছরের মধ্যে এর চেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল মাত্র একবারই, ২০১৯ সালে।
একুশ-বাইশে দক্ষিণবঙ্গের বর্ষায় আকাশপাতাল তফাত হতে পারে, কিন্তু কৃষকের কপাল একই। গত জুনের অতিবৃষ্টিতে আমন ধানের তৈরি বীজতলা ধুয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়বার চাষে নামতে হয় কৃষককে। এ বারও দুশ্চিন্তায় চাষিরা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেও ভাল বৃষ্টি না হলে, শুকনো জমি নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। যত দেরি হবে, তত উত্পাদন মার খাওয়ার আশঙ্কা।
যত দোষ বঙ্গোপসাগরের। এ বার জুনে একটিও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি বঙ্গোপসাগরে। এ রকম শেষ বার ঘটেছিল ২০১২ সালে। অর্থাত্, ১০ বছর পর জুনে নিম্নচাপ-শূন্য বঙ্গোপসাগর। তারই মাসুল গুনছে দক্ষিণবঙ্গ। একই কারণে বিপদে উত্তরবঙ্গও। দক্ষিণ যখন ঘাটতির পাহাড়ে, উত্তরে তখন অতিবৃষ্টি। ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গ-সিকিম মিলিয়ে। যার জেরে একবার নয়, দু’দু’বার বানভাসি উত্তর।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘দক্ষিণবঙ্গে ভাল বৃষ্টির জন্য দখিনা-পূবালি বাতাস দরকার। এই বাতাস তখনই বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকবে, যখন নিম্নচাপ অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গের উপর থাকবে। অক্ষরেখাকে দক্ষিণবঙ্গে টেনে আনার কাজ করে নিম্নচাপ। কিন্তু এ বছর জুনে কোনও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি। এটা কিছুটা অস্বাভাবিক তো বটেই।’ এর ফলে নিম্নচাপ অক্ষরেখা ঠায় দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গে। বাতাসও দখিনা-পশ্চিমী। যে বাতাস সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে, উত্তর-পূর্ব ভারতে। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি নামাচ্ছে জোরালো সেই বাতাস।
অক্ষরেখা কিছুটা দক্ষিণে সরেছে। তাই আপাতত উত্তরবঙ্গের কিছুটা রেহাই। ফলে বানভাসি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের কপাল খুলছে না এখনই। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, ৪ জুলাইয়ের পর বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘ওড়িশা-বাংলা উপকূলে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে। তখন কিছুটা বৃষ্টি বাড়তে পারে। যদিও প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। ঘাটতি মেটার সম্ভাবনাও এখনই নেই।’ ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হয় কি না, হলেও ওড়িশা না বাংলা, কোন রাজ্যের দিক ঘেঁষে থাকবে, এ রকম একাধিক শর্তের উপরই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ভবিষ্যত্ নির্ভর করবে।