কলকাতা: রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করাতে গেলেও লাগছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swastha Sathi Card)। সম্প্রতি তা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার। কার্ডের ৫ লক্ষ টাকা শেষ হয়ে গেলে নিখরচায় পরিষেবা কি তবে মিলবে না? সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা তো বিনামূল্যে হয়, সেক্ষেত্রে কী দরকার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড? এমনই সব প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে রাজ্যের বহু মানুষের মধ্যে।
কেন সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বাধ্যতামূলক করল সরকার?
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সরকারি হাসপাতালে বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি নির্দেশিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এই নির্দেশিকার মূল বক্তব্য হল, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে সরকারি হাসপাতালে ইনডোর পরিষেবার ক্ষেত্রে রোগীকে তা দেখাতে হবে। তা রেজিস্টার করবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল। আর যদি এখনও কারও কাছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থেকে সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার অথবা, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের তরফেই আবেদন সাপেক্ষে তৈরি করে দেওয়া হবে।
এখান থেকে একটা ধারনা তৈরি হয়েছে, তাহলে সরকারি হাসপাতালে যে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পরিষেবা রয়েছে, সেটা কি বাতিল হয়ে গেল? কোনও পরিবারের একজনের চিকিৎসায় ৫ লক্ষ টাকা লেগে গেলে, বাকি সদস্যরা কি সরকারি হাসপাতালে আর বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন না?
এই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। এতে রোগী ও রোগী পরিবারের ভয় পাওয়া বা ভাবনার কোনও কারণ নেই। আসলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে রোগী আগে ভাবতেন, সরকারি হাসপাতালে গেলে আমি আমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটা দেখাব না। কারণ, সেখানে তো বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া সরকারি স্বাস্থ্য বিমার যে পাঁচ লক্ষ টাকার লিমিট রয়েছে, তা শেষ হলে তো বিপদে পড়ব! পরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনে যেতে হলে কী করব?
এই ভাবনা অমূলক বলে জানাচ্ছে রাজ্য। স্বাস্থ্য ভবন থেকে বলা হচ্ছে, আসলে স্বাস্থ্যসাথী তো একটা থার্ড পার্টি ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে সরকার এখন বুঝতে পারছে না রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধাপ্রাপ্তের সংখ্যা ঠিক কত? তাছাড়া, স্বাস্থ্যসাথীতে দুই ভাবে টাকাটা কাটে। একটা ওষুধে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য একটা ভর্তুকি দিতে হয়। তাই খরচটা এক জায়গা থেকে করতেই এই ব্যবস্থা। আরও সরল ভাবে বললে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতেই সরকারি হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তাছাড়া কার্ডের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে জানানো হচ্ছে, এ নিয়ে ভাবনার কোনও কারণ নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা ফুরিয়ে গেলেও, বিনামূল্যেই চিকিৎসা মিলবে সরকারি হাসপাতালে। আর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে, টাকা আছে কিনা, সেটা কোনও ভাবনার বিষয়ই নয়।
রোগীর কাছে জেনে নেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে কিনা
সরকারি হাসপাতালে জেনে নেওয়া হচ্ছে রোগীর স্বাস্থ্যসাথী আছে কিনা। এর মাধ্যমে হিসাব করা হচ্ছে ঠিক কতজন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছেন। তাছাড়া যদি রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ইনসুরেন্স মানি খরচ করতে না চান, সেটাও তিনি করতে পারেন। যদিও চিকিৎসক সংগঠনগুলি বলছে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলেই বিতর্ক হত না। কেন সেটা উহ্য রাখা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Covid Restriction: শিয়রে ওমিক্রন! বিধি-নিষেধের সময়সীমা আরও বাড়ল রাজ্যে