কলকাতা: চাকরির দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টে চলেছে শিক্ষা দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা। একের পর এক মামলার মধ্য দিয়ে এই চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ঈশ্বর হয়ে উঠেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সময় তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির চেয়ারে। তবে মঙ্গলবার (৫ মার্চ), অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামের আগে থেকে বিচারপতি শব্দটা সরে গিয়েছে। বিচারপতির কালো কোট ছেড়ে তিনি সামিল হতে চলেছেন গেরুয়া শিবিরে। যোগ দেবেন বিজেপিতে। এরপরও কি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সেই ঈশ্বরের চোখেই দেখবে শিক্ষা দুর্নীতির শিকার হওয়া বেকার যুব সমাজ? নাকি প্রাক্তন বিচারপতির নয়া রাজনৈতিক পরিচয় বদলে দেবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী? কী বলছেন তাঁরা?
চাকরির দাবিতে যে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতী রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের অন্যতম নলহাটির সোমা দাস। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশিই দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন এই তরুণী। তাঁর কথা জানতে পেরে তাঁকে এজলাসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। জানতে চেয়েছিলেন, অন্য কোনও সরকারি চাকরি তিনি করতে চান কি না? সসম্মানে বিচারপতির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, শিক্ষিকা হওয়াই তাঁর স্বপ্ন। এই খবর প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক হইচই হয়েছিল। পরে নবান্নের নির্দেশে চাকরি পেয়েছিলেন সোমা। স্বপ্নপূরণ হয়েছিল তাঁর। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রণাম জানিয়েছিলেন তিনি। আজ কী বলছেন সোমা?
TV9-এর প্যানেলে এসে সোমা বলেছেন, “আমি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। কাজেই তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আমি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে চিনেছি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে। তিনি যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছেন, বা, আমাদের লড়তে সাহায্য করেছেন, আমার চাকরি হওয়ার পিছনেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকাতেই আমি তাঁকে দেখেছি, চিনেছি। সেই সময় আমদের চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছিল। উনিই ছিলেন একমাত্র আশার আলো। তাঁকে কেন্দ্র করেই আমরা আশা দেখেছিলাম, শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি ঘুঁচে যাবে, আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পাব। এই হিসেবে আমাদের বেকার যুব সমাজের কাছে সেই সময় তিনি সত্যিই মসিহা হয়ে উঠেছিলেন, ঈশ্বর দূত হয়ে উঠেছিলেন। প্রাক্তন বিচারপতি হিসেবে আজকের পরও আমরা তাঁকে সেই চোখেই দেখব। আমরা সবাই জানি উনি অত্যন্ত সৎ, সাহসী মানুষ। সবসময় সাধারণ মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছেন। তবে রাজনীতির জায়গাটা তো খুব নোংরা। রাজনীতিবিদদের জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় জনসাধারণের। তবে, অভিজিৎবাবু যদি রাজনীতিতে গিয়েও সাধারণ মানুষের ভাল করতে পারেন, তাহলে শুধু আমরা না, সারা পশ্চিমবঙ্গবাসী তাঁকে ভগবানের চোখেই দেখবে।”