Nirbhaya Case: ৮ বছর লেগেছে নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি দিতে! তিলোত্তমার কত দিন লাগবে?

Aug 18, 2024 | 1:27 PM

Nirbhaya Case: নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের প্রায় ১২ বছর পর কলকাতায় আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসককে নৃশংস খুনের ঘটনায় সরব হয়েছেন সবাই। 'রাত দখল' করেছেন মহিলারা। নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলছেন অনেকে। দোষীদের শাস্তি হবে কবে? উঠছে এই প্রশ্নও।

Nirbhaya Case: ৮ বছর লেগেছে নির্ভয়ার দোষীদের ফাঁসি দিতে! তিলোত্তমার কত দিন লাগবে?
নির্ভয়ার নৃশংস ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠেন অনেকে

Follow Us

কলকাতা ও দিল্লি: শীতের রাত। বন্ধুর সঙ্গে বাসে উঠেছিলেন বছর তেইশের প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীটি। বাসের চালক, কন্ডাক্টর মিলিয়ে ৬ জন তখন বাসে। তাদের দেখে কোনও সন্দেহ হয়নি ওই যুবতী ও তাঁর বন্ধুর। সেই যাত্রাই যে তাঁর জীবনের শেষ বাসযাত্রা হতে চলেছে, তা ভাবেননি বছর তেইশের যুবতী। বাসের মধ্যে সেই নৃশংস অত্যাচার, গণধর্ষণ। শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ দিল্লির মুনির্কাতে ওই নৃশংস ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। বিক্ষোভ। মিছিল। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিল সবাই। প্রায় ৮ বছর পর ৪ দোষীসাব্যস্তকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তার আগে এক অভিযুক্ত জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। আর এক অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় তাকে ৩ বছর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের প্রায় ১২ বছর পর কলকাতায় আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসককে নৃশংস খুনের ঘটনায় সরব হয়েছেন সবাই। ‘রাত দখল’ করেছেন মহিলারা। নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলছেন অনেকে। নির্ভয়াকাণ্ডের মতো আরজি করের নৃশংস ঘটনায় দোষীদের ফাঁসির সাজার দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় ফিরে দেখা যাক নির্ভয়াকাণ্ডের ইতিবৃত্ত।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর-

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সেই নৃশংস ঘটনার কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠেন অনেকে। সেদিন রাতে নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধু সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। প্রথমে অটো ধরে মুনির্কা বাসস্ট্যান্ডে আসেন। রাত তখন সাড়ে ৯টা। তাঁদের সামনে একটি বাস এসে দাঁড়ায়। এক নাবালক মুখ বাড়িয়ে জানতে চায়, তাঁরা কোথায় যাবেন। দ্বারকার কথা বলতেই সে জানায়, ওইপথেই বাস যাবে। বাসে উঠেন নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধু। বাসে তখন চালক-সহ ৬ জন। নির্ভয়ার কাছ থেকে ২ জনের ভাড়া হিসেবে ২০ টাকা নেয় কন্ডাক্টর। তখনও কিছু সন্দেহ হয়নি তাঁদের। কিন্তু, বাস অন্য রুট ধরতেই নির্ভয়ার বন্ধু চমকে উঠেন। রুট বদলানোর কারণ জানতে চান। ততক্ষণে নিজেদের আসল মূর্তি ধারণ করেছে ওই ৬ জন। বাসের দরজা বন্ধ করে দেয়। নির্ভয়ার বন্ধুকে মারধর করা হয়। তারপর শুরু হয় সেই নৃশংসতা। নির্ভয়াকে গণধর্ষণের পাশাপাশি তাঁর যৌনাঙ্গে রড ঢোকানো হয়। ৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ছিল এক নাবালক। নৃশংস অত্যাচারের পর নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালায় তারা।

১৩ দিনের লড়াই শেষে হার মানেন নির্ভয়া-

১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় পথচারীরা। পুলিশ নির্ভয়াকে সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁর চিকিৎসায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। কিন্তু, অবস্থার উন্নতি হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার নির্ভয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৬ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি দেন নির্ভয়া।

গ্রেফতার ও বিক্ষোভ-

ঘটনায় জড়িতদের ধরতে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ডেপুটি কমিশনার প্রমোদ কুমার কুশওয়াহার নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়। হাইওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাসটিকে চিহ্নিত করেন তদন্তকারীরা। প্রথমে গ্রেফতার করা হয় বাসচালক রাম সিংকে। তারপর একে একে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে সিট। ধৃত ৬ জনের মধ্যে একজন নাবালক। সেইসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছরের মতো। বাকি ৪ সাবালকের মধ্যে ছিল রাম সিংয়ের ভাই মুকেশ সিং(২৬), বছর কুড়ির বিনয় শর্মা, বছর উনিশের পবন গুপ্তা। সবশেষে গ্রেফতার করা হয় বছর আঠাশের অক্ষয় ঠাকুরকে।

এদিকে, নির্ভয়ার উপর নৃশংস ঘটনা সামনে আসার পরই রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। পুলিশের সঙ্গেও খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ দ্রুত চার্জশিট ফাইলের আশ্বাস দেয়। এমনকি, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করা হয়।

তিহারেই আত্মহত্যা এক অভিযুক্তর-

তিহার জেলে রাখা হয়েছিল অভিযুক্তদের। ঘটনার মাস তিনেক পর সেখানেই আত্মহত্যা করে অভিযুক্ত বাসচালক রাম সিং। কয়েক মাস পর ২০১৩ সালে ৩১ অগস্ট নাবালক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে জুভেনাইল জাস্টিট বোর্ড (JJB)। অভিযোগ, নির্ভয়ার উপর বর্বরোচিত হামলায় সবচেয়ে নৃশংস ভূমিকা নিয়েছিল এই নাবালক। তবে সাবালক না হওয়ায় তাকে তিন বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় জেজেবি।

বাকি ৪ অভিযুক্তর ফাঁসির সাজা-

২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪ অভিযুক্তকে দোষীসাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। এরকম নৃশংস ঘটনার জন্য তাদের ফাঁসির সাজা দেয়। নিম্ন আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় অভিযুক্ত চারজন। তাদের ফাঁসির সাজা মকুব করেনি আদালত। ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্ট।

তারপর কেটে যায় প্রায় বছর তিনেক। ২০১৭ সালের ৫ মে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় অক্ষয় ঠাকুররা। বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। শুনানির সময় নির্ভয়ার উপর নৃশংসতার ঘটনায় চমকে ওঠেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। এই নৃশংসতাকে ‘শকের সুনামি’ বলে সুপ্রিম কোর্ট। বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনার অ্যাখ্যা দেয়। খারিজ করে দেয় অক্ষয় ঠাকুরদের আবেদন।

সুপ্রিম কোর্টও তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয় মুকেশ। তার আবেদন খারিজ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ মুকেশের আবেদন খারিজ করেন।

ফাঁসিতে ঝোলানো হল চার দোষীসাব্যস্তকে-

২০২০ সালের ২০ মার্চ। ভোর সাড়ে ৫টা। নৃশংস ঘটনার প্রায় ৭ বছর ৪ মাস পর মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

গত ৯ অগস্ট আরজি করে ‘তিলোত্তমা’র দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত একজনকে ধরেছে পুলিশ। ‘তিলোত্তমা’-র নৃশংস পরিণতির পর দোষীদের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকে। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত দোষীদের ফাঁসি চাইছেন। সিবিআইকে সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। ‘তিলোত্তমা’-র নৃশংস পরিণতিতে জড়িতদের শাস্তি কতদিনে হবে, সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। মেয়ের ধর্ষকদের শাস্তির জন্য সাড়ে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল নির্ভয়ার মা-বাবাকে। তিলোত্তমার মা-বাবাকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? উত্তর শুধু জানে ভবিষ্যৎ।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)

Next Article