জলঙ্গি: জুনে রাখলেও বাংলার জন্য বিশেষ দরাজ হতে দেখা যায়নি বর্ষাকে। তবে জুলাইয়ের শুরু থেকে খানিকটা হলেও অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। যদিও এখনও গোটা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির যে ঘাটতি রয়েছে তাতে চাষাবাদের বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা। এদিকে বৃষ্টিকে (Rain) আমন্ত্রণ জানাতে গোটা দেশেই বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে নান রীতি। যুগের পর যুগ ধরে রয়েছে তার চল। এখনও সেই সমস্ত রীতি-রেওয়াজ বন্ধ হয়নি। তাই বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানাতে এ বছরেও মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) জলঙ্গি থানার ঝাউদিয়ার গ্রামে ‘দধি-কাদায়’ মাতল গ্রামের বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই। যা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে উন্মাদনার অন্ত ছিল না।
এই ‘দধি-কাদার’ মধ্য দিয়েই বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানান গ্রামবাসীরা। গ্রামের বয়ষ্কদের দাবি, দধি কাদা করলেই নাকি আকাশ ছেয়ে যায় ঘনকালো মেঘে। আর সেই মেঘ থেকে অঝোরে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। তাই প্রতি বছরই চাষাবাদে জলের ঘাটতি মেটাতে এই রীতির মধ্য দিয়ে বৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানান গ্রামবাসীরা। গ্রামের সমস্ত বাড়ির খুদেরা এদিন জড়ো হয় এক জায়গায়, মেতে ওঠেন মাঝ বয়সিরাও। অনেকে বাড়ির সামনেও বাচ্চাদের উপর কাদা-জল দিয়ে এই রীতি পালন করেন। জল-কাদার মধ্যেই চলে উল্লোড়। সঙ্গে সকলে মিলে আকাশের দিকে তাকিয়ে সুরের ছন্দে বলতে থাকেন, “আল্লাহ মেঘ দে ,পানি দে, ছায়া দেরে, দে আল্লাহ পানি দে।”
দধি কাদা শেষে খোঁজ চলে কোলা ব্যাঙের। বিয়েও দেওয়া হয় কোলা ব্যাঙের। বিয়ের শেষে কলা গাছ দিয়ে বানানো হয় গাড়ি। সেই গাড়িতে ব্যাঙ বউ, ব্যাঙ বরকে নিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়। বরযাত্রী, কনেযাত্রী হিসাবে সেখানে পা মেলান গ্রামের অন্যান্যরা। পুরো অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। এদিন গ্রামের সকলের জন্য একই হেঁসেলে চাপানো হয় রান্না। বনভোজনের আদপেই তোড়জোড় শুরু হয় খাওয়ার। সকলের বাড়িতে থেকে চাল-ডাল আলু নিয়ে এসে জড়ো করা হয় এক জায়গায়। গ্রাম জুড়ে মম করতে থাকে খিঁচুড়ির গন্ধ। এখন দেখার ঝাউদিয়ার গ্রামের বাসিন্দাদের ডাকে কতটা সদয় হয় বর্ষা।