কলকাতা: এ কি মমতার গান্ধীগিরি? শুক্রবারের বিধানসভার ঘটনা পরম্পরা দেখলে এমনটাই মনে হতে পারে রাজ্যবাসীর। যে শুভেন্দু অধিকারী প্রায় রোজই নাম করে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে থাকেন। সেই মমতাই এদিন ‘স্নেহে’র শুভেন্দুকে কাছে টেনে নিলেন। এমনকী প্রকাশ্যে শিশির-শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর একদা সুসম্পর্কের কথাও জানালেন দ্বিধাহীনভাবে।
এদিন বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধের পর নিজের ঘরে শুভেন্দুকে ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে দেখা করেন শুভেন্দু। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে অধিবেশন কক্ষে বক্তব্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের প্রতি এদিন নরম সুরেই কথা বলেন তিনি। এদিন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু দাবি করেছেন, এই সরকারের আমলে প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকা হয় না বিরোধীদের। শুভেন্দুর সেই বক্তব্যের রেশ ধরে মমতা জানান, বিভিন্ন সময় বৈঠকে ডাকা হলেও বিরোধীরা আসেন না। তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনারা কটা বৈঠকে আমাদের ডাকেন?’ বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এদিন বিরোধীদের আমন্ত্রণ করেন মমতা। চলচ্চিত্র উৎসবেও উপস্থিত থাকার কথা বলেন বিরোধীদের।
আজ শুভেন্দু বিরোধীর ভূমিকায় থাকলেও অধিকারী পরিবারের সঙ্গে মমতার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা সবারই জানা। শুভেন্দুর বাবা তথা শিশির অধিকারীকে বরাবরই ‘দাদা’ বলে ডাকতেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আজ রাজনীতির ডামাডোলে সেই সম্পর্কে চিড় ধরলেও শুক্রবার শুভেন্দুর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই ‘শিশির দা’র কথা বললেন তিনি। বক্তব্যের মাঝে শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘আপনি এক সময় কংগ্রেসে, তারপর তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন। আপনার বাবা সিনিয়র নেতা, তাঁকে আমি সম্মান করি।’
যে শুভেন্দু প্রায় প্রত্য়হ সরকারকে নিশানা করে থাকেন, তাঁকেই এদিন ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করলেন মমতা। যে ভোটে জিতে শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হয়েছে, সেই ভোটে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দ্বৈরথের পর গত ২ বছরে পরস্পরের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করেছেন, এমন নজির খুব একটা নেই। এদিন বক্তব্য পেশ করার সময় মমতা বলেন, ‘যাঁকে ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম, তিনি বললেন অফ দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি।’ উল্লেখ্য, এদিন শুভেন্দু মন্তব্য করেন, সরকার এখন অফ দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি।
সূত্রের খবর, এদিন শুভেন্দু ঘরে প্রবেশ করতেই নাকি মমতা বলে ওঠেন, ‘অনেকদিন পর এত কাছে এলি।’ আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দেওয়ার সময়ও শুভেন্দুর খোঁজ করেন মমতা। বর্তমানে বেশির ভাগ সরকারি অনুষ্ঠানই এড়িয়ে যান শুভেন্দু তথা বিরোধীরা। কিন্তু এদিন মাল্যদানের সময়, মমতা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, ‘শুভেন্দু কোথায়?’ মমতার নির্দেশ মতো ডেকেও পাঠানো হয় বিরোধী দলনেতাকে। তবে, শুভেন্দু যাননি। পরে তিনি জানান, নতুন ভবনের উদ্বোধনে বিরোধী দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা বিধানসভার ইতিহাসে প্রথমবার। তাই মাল্যদান করতেও যাননি তিনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অধিকারী পরিবারের প্রতি মমতার এমন নরম সুর রাজনৈতিক মহলে জল্পনার বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে যখন, ‘ডিসেম্বর’ নিয়ে জল্পনা বাড়াচ্ছেন বিজেপি নেতারা, তখন এই বিষয়টা কি নিছকই রাজনৈতিক সৌজন্য? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।