কেমন ছিল অভিনেতা কাঞ্চন জীবনের প্রথম জীবন? যদি মনে করেন ফুলের পাপড়ি বিছানো ছিল তাঁর পথে তা হলে ভুল করবেন। সব সফল মানুষের জীবন তেমনটা হয় না। কিছু মানুষের পথে কাঁটা থাকে অতিরিক্ত বেশি। যেমনটা ছিল কাঞ্চনের।
কাঞ্চনের বাবা ছিলেন কারখানার কর্মী। তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, হঠাৎই বাবার কারখানায় তালা পড়ে যায়। এদিক-ওদিক করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনিই। কিন্তু কাঞ্চন যখন ক্লাস টেনে পড়েন, বাবার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। সেই থেকে শুরু কাঞ্চনের জীবনযুদ্ধ। হঠাৎই তিনি বুঝতে পারেন পাঁচ বছর বয়স বেড়ে গিয়েছে তাঁর। এটা-ওটা-সেটা, সেলসম্যানের চাকরি করে, নানা কিছুরব মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতে হয়েছে কাঞ্চনকে। তাঁকে বোঝানো হয়েছে বাড়িতে ৬টা পেট তাঁকেই চালাতে হবে ওই বয়সে। তিনি, বাবা, মা, ছোট বোন, দাদু, দিদা। তাঁদের সকলের দায়িত্ব কাঞ্চনের মাথার উপর।
এই কাজগুলো করতে-করতেই হঠাৎ থিয়েটারের সঙ্গে আলাপ হয় কাঞ্চনের। দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন ঘণ্টা এই থিয়েটারই তাঁকে অক্সিজেন জুগিয়েছে। নাইট কলেজে স্নাতক হওয়া কাঞ্চন ধীরে-ধীরে অভিনয়কে রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়েছিলেন। একটা সময় পর তাঁর কাছে আসে একটি নন- ফিকশন শো হোস্ট করার অফার।
একটা সময় চুল কাটার দোকানের ম্যানেজারের চাকরি করতেন কাঞ্চন মল্লিক। বেতন পেতেন মাত্র ৯০০ টাকা। ১১০০ টাকা হওয়ার কথা ছিল কিছুদিনের মধ্যে। এমতাবস্থায় তাঁর বন্ধু পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হঠাৎই তাঁকে খুঁজে পেয়ে ‘জনতা এক্সপ্রেস’ নামের একটি নন-ফিকশন শো হোস্ট করাতে নিয়ে যান। দশটা এপিসোড হওয়ার পর কাঞ্চনকে আর কোনওদিনই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর কাছে আসে একের পর-এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করার সুবর্ণ সুযোগ। নিজেকে এক প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা হিসেবে দেখতে থাকেন কাঞ্চন। চরিত্রাভিনেতা হয়েও তাঁর কোনওদিন কষ্ট হয়নি। মনের ইচ্ছে এবং অদম্য জেদের কারণে কাঞ্চন আজ এ জায়গায় দাঁড়িয়ে।