বাজারে এখন নকল জিনিসে ভরে গিয়েছে। চাল, ডিম, সাবান, শ্যাম্পু থেকে শুরু করে শাড়ি সবেতেই এখন নকল ঢিকে গিয়েছে। বেনারসি, সিল্ক, জামদানি- এই সব ঐতিহ্যবাহী শাড়ি সবই এখন নকলে ছেয়ে গিয়েছে। পয়লা বৈশাখ মানেই সাবেকি লাল-সাদা জামদানি শাড়ি, খোঁপায় বেল কিংবা জুঁই এর মালা আর সাবেকি সোনার গয়নায় সেজে ওঠা। আজকাল অনেকেই আবার হাতে বানানো অভিনব সব গয়নাতেও নিজেকে সাজিয়ে তুলছেন। চৈত্র সেলের হিড়িকে পাঞ্জাবি, বেডশিটের সঙ্গে বেশ কয়েকটা শাড়িও কিনেছেন। আর সেই তালিকায় রয়েছে জামদানিও। কিন্তু আপনার জামদানি খাঁটি তো? ডিজাইন আর রং দেখে আসল-নকল শাড়ি বিচার করা কিন্তু বেশ কঠিন কাজ। সফট জামদানি, ঢাকাই জামদানি হরেক রকম জামদানিতে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। দামেও বিশেষ হেরফের হয় না।
জামদানি শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য। ডিজাইনের জন্যই কিন্তু তা আভিজাত্য এবং রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। আমাদের পছন্দের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকে জামদানি। তবে জামদানিকে শুধুমাত্র শাড়ি বললে ভুল হবে। কারণ জামদানি হল একরকম শিল্প, যা একটিমাত্র দেশের ভৌগলির পরিবেশেই তৈরি হয়। তাঁতিরা তাঁদের সুনিপুণ দক্ষতায় এই শাড়ি বোনেন।
জামদানি শাড়িতে জলপাড়, জবাফুল, করোলা, তেরছা, দুবলা, বলিহার, পান্না হাজার, পানসী, বটপাতা, কটিহার ইতিযাদি। যে জামদানিতে ছোট ফুল বা লতাপাতার ডিজাইন তেরছা ভাবে থাকে তাকে তেরছা জামদানি বলা হয়। ছোট ছোট ফুল, লতাপাতার পুটি এগুলি যদি শাড়ির জমিনে জাবের মত থাকে তাহলে তাকে বলে জালার নকশা।
জামদানি শাড়ি চেনার উপায়
আসল জামদানি শাড়ি কিন্তু হাতে বোনা হয়। তাই এর ডিজাইন হয় খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। ডিজাইনগুলো খুব মসৃণ হয়। আসল জামদানি শাড়ি তৈরির সময় তাঁতিরা একটি সুতোর সাহায্যেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুনন করে থাকেন।
এই শাড়ির সুতোর কোনও অংশ বেরিয়ে থাকে না। জামদানি শাড়ির সামনের দিক ও পিছনের দিকের বুনোট কিন্তু একই রকমের হয়। আসল জামদানি শাড়িতে সুতি ও সিল্ক সুতো ব্যবহার করা হয়। সুতোর কাউন্ট দিয়ে সুতোর মান বোঝা যায়।
সুতো যত বেশি চিকন হবে ততই কিন্তু কাজ সূক্ষ্ম হবে। তবে শাড়ি কতটা সূক্ষ্ম ও সুন্দর হবে তা কিন্তু নির্ভর করে তাঁতির দক্ষতার উপর। সুতো বেশি চিকন হলে তা যেমন বুনতে বেশি সময় লাগে তেমনই কিন্তু দাম বেশি হয়। একটি জামদানি তৈরি করতে একজন তাঁতিকে গড়ে ১২-১৪ ঘন্টা কিন্তু কাজ করতে হয়। শাড়ির ডিজাইনের উপরই কিন্তু সব নির্ভর করে। তাই একটা জামদানি শাড়ি বুনতে সময় লাগে ১ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত।
তবে মেশিনে বোনা শাড়ি সপ্তাহে ৮-১০ টা তৈরি হয়। তাই এর দামও কিন্তু অনেক কম হয়। জামদানি শাড়ির শুরুতে সাড়ে পাঁচ হাত পর্যন্ত কোনও পাড় থাকে না। অর্থাৎ শাড়ির যেটুকু অংশ কোমরে গোঁজা থাকে সেখানে কোনও পাড় নেই।
কিন্তু মেশিনে বোনা শাড়িতে পুরোটাই পাড় থাকে। হাতে বোনা জামদানির ওজন যেমন কম হয় তেমনই কিন্তু আরামদায়ক। এদিকে মেশিনে বোনা জামদানি খসখসে। নাইলনের সুতো দিয়ে তৈরি হয় বলে একটু ভারিও হয়।
শাড়ি তৈরির সময়, সুতোর মান এবং কাজের ধরন অনুযায়ী জামদানি শাড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ৩০০০ থেকে শুরু করে ১২০০০০ টাকা বা তার বেশি পর্যন্ত দাম হতে পারে।