প্রথম পাতে শাক খাওয়া বাঙালির রীতি। আগেকার দিনে যে কোনও অনুষ্ঠানে আগে পাতে নুন, লেবু, লঙ্কা আর অল্প করে শাক ভাজা দেওয়া হত। তবে অন্য খাওয়া। প্রাচীন কাল থেকেই মুনি-ঋষিরা এই শাকাহারের কথা বলেন। শাকের মধ্যে রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। যা শরীরে অপুষ্টির ঘাটতি মেটায়। শীত মানেই বাজার ছেয়ে যায় একাধিক রঙিন শাক-সবজিতে। সেই তালিকায় থাকে নানা রকম শাক, গাজর, পালং, মূলো, বীট, টমেটো, ক্যাপসিকাম-সহ আরও কত কী। এই শীতে পুরো বাংলা জুড়ে যে পরিমাণ শাক পাওয়া যায় তা আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। অনেক শাকের নামও আমরা জানি না। পালং, মেথি, সর্ষে, লাল শাক, পুইঁ, কলমি, খসলা ছাড়াও শীতকালে বাজারে ওঠে নটে শাক (Amaranth Leaves)। গ্রামাঞ্চলে এখনও বাড়িতে বাড়িতে থাকে এই শাকের বাগান। শহরের বাজারেও আসে এই শাক। যদিও অনেকেই তা চেনেন না। কিংবা রান্নার পদ্ধতিও অনেকের কাছে অজানা। তবে শীতের শুরুতে এই শাক শরীরের জন্য খুব উপকারি। রোজ খেলে ফল মিলবে।
নটে শাক আমরান্থ নামে পরিচিত হিন্দিতে। মূলত ওষধি গাছ হিসেবেই একে ব্যবহার করা হয় আয়ুর্বেদে। নটে শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এছাড়াও নটে শাক একাধিক রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। রক্ত পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই শাকের। শরীর ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে। শুধু আমাদের রাজ্যেই নয়, ভিন রাজ্যেও চল রয়েছে এই শাকের। ভাজা থেকে চচ্চড়ি- যে ভাবে খুশি খাওয়া যায় এই শাক। মাছের মাথা দিয়ে খেতেও বেশ ভাল লাগে। এই শাকের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফেনোলিক যৌগও শরীরের একাধিক কাজে লাগে।
নটে শাকের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রণও। ফলে যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাঁরা যদি রোজ খেতে পারেন তাহলে খুব ভাল উপকার পাবেন। এছাড়াও রক্তনালীর গঠন, পেশীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই নটে শাকের। এই শাকের মধ্যে থাকে অ্যামারান্থ গ্যালিক অ্যাসিড এবং ভ্যানিলিক অ্যাসিড- যা বার্ধক্য থেকে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই নটে শাক। কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। আছে টোকোট্রিয়েনলস। যা এক ধরণের ভিটামিন ই। আর তাই এই শাক খেলে কোলেস্টেরল দ্রুত কমে যায়।
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যেও উপকারী হল এই শাক। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। ফলে টাইর ২ ডায়াবেটিস রুখতে কার্যকরী এই শাক। এই শাকের পাতায় এক রকম প্রোটিন থাকে। যা ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই শাক।