নামী-দামী শপিং মল থেকে শুরু করে শহুরে শপিং মল আজকাল হইচই চলে বাটন মাশরুম নিয়ে। মাশরুমের উপকারিতা অনেক। বর্তমানে এই মাশরুমের উপকারিতা নিয়ে অনেক রকম লেখালেখিও চলে। তবে জঙ্গলমহলে এই সময় বাজারে আরও একরকম ছাতু ওঠে,যা দুগ্গাছাতু বা পরব ছাতু নামেই পরিচিত। এই ছাতুকে অনেকে আবার কাড়ান ছাতুও বলেন। বাজারে ওঠা মাত্রই পড়ে যায় এই ছাতু কেনার হিড়িক। জঙ্গলমহল এবং ঝাড়খন্ডের একাংশই বিশেষ ধরনের এই মাশরুমের সঙ্গে পরিচিত। যা স্বাদে, গন্ধে প্যাকেটবন্দি বাটন মাশরুমকে দশ গোল দেবে। শালবনে মাটিতে জন্মায় এই ছাতু। তবে এই কাড়ান ছাতু জন্মানোর প্রধান শর্ত হল বৃষ্টির পর রোদঝলমলে আবহাওয়া।
টানা দু দিন বৃষ্টির পর যে রোদ ওঠে, সেই রোদেই এই ছাতুর দেখা পাওয়া যায় সবচাইতে বেশি। এই ছাতু পাঁচতারা শহরে আমদানি হয় না। আর সেখানকার মানুষ এই ছাতুর কদরও তেমন বোঝেন না। জঙ্গলমহলের স্থানীয় সাহিত্যেও উল্লেখ রয়েছে এই ছাতুর- ‘আশ্বিনা-টানের দিনে, পবর ছাতুর পার্বণী/ আইস্বে জামাই রাত্যেঁ, কাড়ান ছাতু দিব উয়ার পাত্যেঁ’। বর্ষার জল জমিতে জমলে সেখান থেকে চাষ-আবাদ ভাল হয় না। ফলনও হয় কম। ঘরে টান পড়ে খাদ্যশস্যের। ভরসা তখন জঙ্গলই। বৃষ্টির পর জঙ্গলে এই ছাতু বয়ে আনে দুর্গার আগমন বার্তা। আর এই ছাতু খাইয়ে মান রক্ষা হয় গৃহস্থের।
একসময় মাশরুম বা এই ছাতুকে বেশিরভাগই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখতেন। ইদানিং সেই মাশরুমের উপকারিতা এবং লাভের মুখ দেখে প্রচুর মানুষ এখন চাষ করছেন। অনেকে এই মাশরুম চাষ করেই জীবীকা চালান। মাশরুমের চাইতে এই দেশি ছাতুর উপকারিতাও অনেক বেশি। ভোরের আলো ফোটার আগেই তুলতে হয় এই ছাতু। কুঁড়ির দামই সবচাইতে বেশি। আর তার উপকারিতাও বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০০ গ্রাম ছাতুর মধ্যে প্রোটিন ২৫-৩৫ গ্রাম, ভিটামিন ৫৭-৬০ গ্রাম ও ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, শর্করা থাকে। সেই সঙ্গে থাকে ৪-৬ গ্রাম পর্যন্ত হেলদি ফ্যাট। ফাইবারের পরিমাণও থাকে প্রচুর। যা অন্যান্য অনেক খাবারেই থাকে না। যে কারণে মাছের তুলনায় মাশরুম বেশি উপকারী।
যে ভাবে রান্না করবেন
ছাতু ভালো করে ধুয়ে নিয়ে কেটে হলুদ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে সরষের তেল গরম করে আলু, পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা, রসুন কুচি আর ছাতু দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। এবার এর মধ্যে পোস্ত বাটা দিন। স্বাদমতো নুন আর চিনি দিয়ে কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে সামান্যই জল দিন। এই তরকারি বেশ মাখা মাখা হয়। গরম জলে খেতেও বেশ লাগে।