কোলেস্টেরল হল একরকম মোমের মত পদার্থ। যা আমাদের রক্তে পাওয়া যায়। শরীরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামাল দেয় এই কোলেস্টেরল। তবে কোলেস্টেরল অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে তা কিন্তু শরীরের জন্য একপ্রকার বিষ। তবে HDL-(high-density lipoprotein) কিন্তু শরীরের জন্য ভাল কোলেস্টেরল হিসেবেই পরিটিত। সমস্যা বেশি হয় এই LDL-নিয়ে। আর এই LDL কিন্তু শরীরের জন্য মোটেই ভাল নয়। অনেক সময় এই কোলেস্টেরল রক্তে জমে গিয়ে ধমনীতে রক্তপ্রবাহে বাধা দেয়। আর সেখান থেকেই কিন্তু আসে একাধিক সমস্যা। রক্তে যদি এই কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যধিক হারে বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় শরীরে কিন্তু অক্সিজেন যুক্ত রক্তও কম প্রবাহিত হয়। আর তাই প্রত্যেক মানুষেরই উচিত বছরে অন্তত একবার কোলেস্ট্রল-ট্রাইগ্লিসারাইডের পরীক্ষা করানো। যদি রক্তে সেই পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লেই থেকে যায় হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি।
কোলেস্টেরলের পরীক্ষা করালে ব্লাড রিপোর্টে উল্লেখ থাকে এই ৪ ফ্যাটের। HDL, LDL, লাইপোপ্রোটিন, ট্রাইগ্লিসারাইড। কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি ২০০ mg/dL এর নীচে হয় তখনই তা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা যে রকম হওয়া উচিত
HDL: ৫০ mg/dL এবং তার উপরে
LDL: ১০০ mg/dL থেকে ১৫০ mg/dL
VLDL: ২৫ mg/dL এবং কম
TG- ১৫০ mg/dL এবং কম
কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে তেমনই কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে। রোজকার ডায়েট থেকে অতিরিক্ত চর্বি, কার্বোহাইড্রেট এসব আগে বাদ দিতে হবে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রোটিন, খনিজ যুক্ত খাবার খেতে হবে। যা আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা রাখবে নিয়ন্ত্রণে। এছাড়াও ওটস, গোটা শস্য, প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি, ফল এসব রাখতে হবে ডায়েটে। বিশেষ করে টক জাতীয় কোনও ফল। রোজ আখরোট, আমন্ড একমুঠো করে খেলেও ভাল ফল পাবেন। রান্নায় একেবারে কম তেল ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে দুধ, দুধের তৈরি খাবার, ঘি-মাখন যতটা সম্ভব কম খাওয়া যায় সেই চেষ্টা করুন।
ডিমের কুসুম, রেড মিট, ময়দা, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড এসব একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলোর কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। এমনকী প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেক, কুকিজ, পেস্ট্রি, পনির, ঘি, মাখন, চিজ এসব বাদ দিতে পারলেই ভাল। এতে শরীর থাকবে সুস্থ। দিনের শুরু করুন চা-বিস্কুট দিয়ে। ব্রেকফাস্টে সবথেকে ভাল হল ওটস। মিড মর্নিং-এ খান একবাটি ফল আর ডাবের জল। লাঞ্চে ব্রাউন রাইস, ডাল, সবজি, একবাটি টকদই, রাতে দুটো রুটি, স্যালাড, সবজির তরকারি আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ এই ভাবে খেতে পারেন। এছাড়াও ডিমের সাদা অংশ, কুইনোয়া, চিকেন স্যালাড, মুগ ডাল, পোহা. ইডলি-সাম্বার, ফ্রুট স্যালাডও কিন্তু কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সবথেকে ভাল যদি কোনও বিশেষজ্ঞের থেকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে নেন। কারণ প্রতিটি মানুষের ডায়েট চার্ট কিন্তু আলাদা হয়।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।