কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে এবার আড্ডা জমবে মেশিন-মেড কফি (Machine Made Coffee)-তে: ‘স্পেশাল কোল্ড কফি’। আগামী ১ এপ্রিল থেকে কফি হাউসে গেলে পাবেন মেশিনের তৈরি এই ‘স্পেশাল কোল্ড কফি’। কলকাতার অন্যান্য কফি শপে মেশিনেই তৈরি হয় মোকা, ক্যাপেচিনো, এসপ্রেসো, ইনস্ট্যান্ট কফি। সে দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ‘ট্র্যাডিশনাল’ ইন্ডিয়ান কফি হাউস। সময়ের সঙ্গে মেনুতে পরিবর্তন এলেও কফি নিয়ে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেনি কফি হাউস। বরং, ইনফিউশন থেকে শুরু করে কোল্ড কফি… হাতেই তৈরি করে পরিবেশন করেছে সে। এবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কফি তৈরির মেশিন বসতে চলেছে অ্যালবার্ট হলের দোতলায়।
শহরে যখন হালফ্যাশনের কফি শপ ছিল না, তখন আড্ডা জমত বইপাড়ার কফি হাউসে। ১৯৪২ সালে যখন ভারতীয় কফি বোর্ড ‘কফি হাউস’ চালু করেছিল, তখন এই জায়গা ছিল ‘ফর দ্য ক্লাস’। কফি আর সিগারেটের সঙ্গে চলত বই পড়া ও আড্ডা। তারপর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। হিন্দু কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও ‘একটা টেবিলে সেই তিন চার ঘণ্টা’ আড্ডাটা চলে। তবে, কফি হাউসের খাবার মুখে তুলতে হয়তো একটু দ্বিধা বোধ করে ‘আর্বান’ তরুণ প্রজন্মের একাংশ। আর যাঁরা রোজের খদ্দের, তাঁদের আড্ডা ‘কালো’তেই জমে। তাই নতুন প্রজন্মের কথা রাখতে এবার মেশিনের তৈরি কফি বিক্রি করবে কফি হাউস।
সময়ের সঙ্গে কফি হাউসের কফির দামও বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির আগে ইনফিউশনের দাম ছিল মাত্র ১৫টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। আর হাতে তৈরি কোল্ড কফির দাম ছিল মাত্র ৩০ টাকা। সেটার দাম এখন ৪৫ টাকা। আর যদি আপনি দুধ কফির খোঁজে যান, তাহলে ইনফিউশনে দুধ মিশিয়ে তার দাম ২৫ টাকা। সেখানে মেশিনে তৈরি ‘স্পেশাল কোল্ড কফি’র দাম যে একটু বেশি হবে, তা জানা কথা। এই এপ্রিল থেকে স্পেশাল কোল্ড কফি বিক্রি হবে ৫৫ টাকা ও ৬৫ টাকায়। ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স কো-অপারেশনের সেক্রেটারি সরফরাজ আহমেদ এই প্রসঙ্গে ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে জানিয়েছেন, তরুণদের চাহিদা মেটাতেই কফি হাউসের মেনুতে এই নতুন সংযোজন। তার উপর গরমকাল আসছে, তাই আশা করা হচ্ছে এই গ্রীষ্মে ‘হিট’ হবে ‘স্পেশাল কোল্ড কফি’।
ইনফিউশন বা ‘কালো’-এর কাছে কফি হাউসের অন্যান্য কফির জনপ্রিয়তা হার মানবে। দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী ফিল্টার কফি এই ইনফিউশন। কফি হাউসের ওয়েটারদের আশঙ্কা এবার হয়তো ‘কালো’র জনপ্রিয়তাও কমছে। সমরেশ বসু, শিবরাম চক্রবর্তী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাপদ রায় থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, অপর্ণা সেন, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস… সকলেই আড্ডা দিতেন এই অ্যালবার্ট হলের দোতলায়। তখন ইনফিউশনই সামর্থ্য ছিল আজকের খ্যাতনামা অনেকের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও দুধ কফির দিকে তাকানোর সাহসও যেত হত না। সেখানে আজকের এই বরফ দেওয়া কফির প্রসঙ্গ তো যেন বিলাসিতা। যেখানে প্রবীণরা এখনও ইনফিউশনের স্মৃতিতে ডুব দেন, সেখানেই তরুণদের চাহিদা পূরণে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কফি হাউস। এবার ১ এপ্রিল থেকে কফি হাউস গেলেই মিলবে মেশিনের তৈরি ‘স্পেশাল কোল্ড কফি’।