আমাদের দেশে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের একটি গ্রাম থেকে তেমনই প্রমাণ মিলেছে। মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলি জেলার কুরখেদা তহসিলের গুরনোলি গ্রামে রাজ্যে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ একটি অভিযান চালানো হয়েছিল। আর তাতেই দেখা যায় একাধিক শিশু অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। ৩ বছর বয়সে যেখানে নূন্যতম ১১-১৭ কেজি ওজন হওয়া উচিত সেখানে অনেকেরই ওজন ১০ কেজির নীচে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সমীক্ষা অভিযান চালানো হয়। এরপরই তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নিয়ে শুরু হয় বিশেষ ডায়েট প্রোগ্রাম। ৩ বছরের বৃষভ উসান্ডে ছিল এই তালিকাভুক্ত। মহারাষ্ট্রের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা গাদচিরোলি অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি জাতীয় উদাহরণ তৈরি করেছে।
গত অক্টোবরে সেখানকার রাজ্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগে ছয় মাস থেকে ছয় বছরের মধ্যে অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের জন্য একটি বিশেষ খাদ্য কর্মসূচি শুরু করা হয়। সেই তালিকায় দেখা যায় অপুষ্টির শিকার এরকম শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭,১১১ জন। আর তারপর সেই বিশেষ প্রোগ্রামের পর সেখানকার ৩,৭৯৪ জনের স্বাস্থ্যের বিশেষ উন্নতি হয়েছে। ওই গ্রামের অধিকাংশই কৃষক পরিবারের সন্তান। ৬ মাস পর তাঁরা দেখেন বাচ্চাদের স্বাস্থ্য আগের তুলনায় ভাল হয়েছে। সেই সঙ্গে ওজন বেড়েছে। আগে যেখানে হাড়-কঙ্কালসার চেহারা ছিল সেই তুলনায় এখন অনেকটাই ভাল। গালে মাংসের আস্তরণ দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে ‘সুস্থ ও সতেজ’ দেখাচ্ছে বাচ্চাগুলোকে- জানান বৃষভের মা সস্বতী রাজেশ উসান্দে। এই প্রোজেক্ট চলার পর প্রায় ৬ মাস পর দেখা যায় প্রায় ২৭ শতাংশেরও বেশি শিশুর স্বাস্থ্যে পরিবর্তন এসেছে।
তবে প্রথমবার এই ভাবে ডায়ের্ট চার্ট তৈরি করে শিশুদের স্বাস্থ্যে যে পরিবর্তন এসেছে তা দেখে খুশি জেলাশাসক কুমার আর্শীবাদ। শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য রাজ্য জুড়েই এমন প্রোগ্রাম শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের শরীরে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তেমনই কিন্তু সেই সব শিশুদের শারীরিক বিকাশও কম হয়। সেই সঙ্গে অনেক বেশি ঝুঁকি থাকে মৃত্যুরও। ভারতের মধ্যে একমাত্র মহারাষ্ট্রেই কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। আইসিডিএসের তরফে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়। তবে কোভিডের ময় এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে সরকারের তরফে আলাদা করেই প্রতি শিশুর পরিবার পিছু ২ কেজি চাল, ডাল, গম, ছোলা, রান্নার তেল, নুন এবং মশলা সরবরাহ করা হয়েছিল।
এছাড়াও রাজ্যের ICDS বিভাগ, পুষ্টিবিদদের সাথে পরামর্শ করে শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি মহারাষ্ট্রীয় রেসিপি রাখা হয়েছিল তালিকায়। সেখানে খিচুড়ি, স্প্রাউট কাটলেট, বাদামের কাটলেট, আটা, বিট, পালংশাক ও সোয়াবিনের আটা মিশিয়ে পরোটা, কারিপাতা দিয়ে বানানো শুকনো চাটনি, ছোলা, চিনেবাদাম, গুড়, তিলের নাড়ু এসব রাখা হয়েছিল। এই প্রতিটি খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন রয়েছে। যা শরীরের যথাযথ পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেছে। অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীদের এই রান্নায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পে খুশি বাড়ির লোকেরাও। প্রতি মাসে শিশুদের বাড়িতে গিয়ে ওজন পরিমাপ করে দেখা হয়েছে। এবং তাতে কিন্তু উন্নতির গ্রাফ উপরের দিকেই।