আমাদের দেশে পনির খুবই জনপ্রিয় একটি পদ। বিশেষত উত্তর ভারতে। উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পনিরের নিজস্ব কিছু রেসিপি রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছরে মার্কিন মুলুকেও চাহিদা বেড়েছে এই পনিরের। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের ইকোনমিক রিসার্চ সার্ভিসের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, গত দশ বছরে সেদেশে দই খাওয়ার খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। বেড়েছে দুধের বিক্রিও। আগের থেকে প্রায় ৭ গুণ।
সেই সঙ্গে সেখানকার বিভিন্ন বেকারিতেও আগের থেকে বেশি পরিমাণে পনির আমদানি হচ্ছে। গত বছরে যেখানে পনিরের জোগানের বেশ কিছুটা এসেছিল মেক্সিকো থেকে এবার কিন্তু সেই বাজার দখল করেছে ভারত। পনিরের চল আমেরিকাতেও বহু বছর ধরে রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে পনিরের যে সব পদ প্রচলিত সেই সব পদ পছন্দ করছেন আমেরিকার অধিবাসীরাও। সেই সঙ্গে মনেপ্রাণে আমিষ খেতে ভালবাসা মার্নিক মুলুকের বাসিন্দারাও ঘীরে ধীরে ঝুঁকছেন নিরামিষ খাবারের দিকে।
কেন পনির নিয়ে এই উন্মাদনা?
নির নিয়ে এই উন্মাদনার নেপথ্যে অনেক কারণই তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। যার মধ্যে প্রধান হল পনিরের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন ও ফ্যাট। যাঁরা কিটো ডায়েট করছেন তাঁদেরও প্রথম পছন্দ পনির। সেই সঙ্গে ২০১৯- সালে পনিরের যা বাজার দাম ছিল তার তুলনায় এখন অনেকটাই বেড়েছে। সেই সঙ্গে পনির রান্না করাটাও বেশ সহজ। নানা ভাবে খাওয়া যায়। য়ে কারণে মাছ-ডিমের তুলনায় তালিকায় প্রথমে রয়েছে পনির।
আরও যা কিছু কারণ রয়েছে-
গুগল বলছে মার্কিনি মুলুকে ভারতীয় রেস্তোরাঁর কদর বেড়েছে এই কয়েক বছরে। ফলে ভারতীয় বিভিন্ন পদও চেখে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানকার অধিবাসীরা। শুধু পনির খেতেই রেস্তোরাঁয় আসছেন অনেকে। এছাড়াও বহু ভারতীয় এখন নিজেদের মতো করে রান্নাঘর চালান সেখানে। দেশি খাবারের স্বাদের সঙ্গে বিদেশিদের পরিচয় করাতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। এই সব কিছু মিলিয়ে পনিরের রেসিপি শিখতেও আগ্রহী হচ্ছেন তাঁরা। পনিরের বিক্রিও বাড়ছে। ফুড মার্কেটের গ্লোবাল সিনিয়র প্রিন্সিপল ( global senior principal for product development at Whole Foods Market) জোয়ী ওয়েলস জানিয়েছেন, ‘দেশ জুড়েই চাহিদা বেড়েছে পনিরের। এমনকী পূর্ব ও পশ্চিমের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতেও পনির আমদানি করা হচ্ছে। সেখানকার সুপারমার্কেটেও মিলছে পনির’।
সেই সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, পনিরের মধ্যে ভালো ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। তৈরিও হয় খাঁটি দুধ থেকে। তবে গ্রিলড পনির এবং দেশি পনির কারির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আর তাই পনির আমদানিতে জের দিচ্ছে আমেরিকা। পনিরের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে আগ্রহ কমেছে ছাগল, ভেড়ার মাংসে।
আমেরিকার শেফরাও ক্রমে মটর-পনিরের তরকারি, পনির পিৎজা বানানোয় দক্ষ হয়ে উঠছেন। তালিকায় রয়েছে ক্লাসিক পালক পনির লাসাঙ্গ, পনির পাস্তাও। এছাড়াও পালং শাক, পনির, গোটা জিরে, ধনে গুঁড়ো, টমেটো সহযোগেও তরকারি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। সবজি আর পনির সঁতে করে ওয়ান পট মিলও পছন্দ করছেন অনেকেই।
পনবিরের চাহিদা তুঙ্গে হওয়ার সান ফ্যান্সিসকো তে বেড়েছে গো-প্রতিপালনও। বরং অনেক বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ভেষজ পনির তৈরিতে।
২০১৯ সালেও আমেরিকায় যে পরিমাণ ডিম বিক্রি হত, ২০২১-এ সেই বিক্রি এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে অনেকটাই। বরং পনির টিক্কা রোল, গ্রিলড পনির, ইয়োগার্ট-এসবের চাহিদা বেড়েছে বাজার জুড়ে। সপ্তাহের পাঁচ দিনই শহরের দোকানগুলিতে পনির বিক্রি তুঙ্গে। প্রায় একহাজার দোকান এখন নিয়মিত ভারতীয় দেশি পনিরের জোগান দেয়। আগামী বছরে সেই সংখ্যাটা আরও কিছুটা বাড়বে বলে তাঁদের আশা। বিজ্ঞানীরাও এখন জোর দিচ্ছেন সে দেশের গো-প্রতিপালনের উপর। সব মিলিয়ে খাঁটি ভারতীয় স্বাদে তৈরি এই ক্রিম পনিরেই মজেছে মার্কিন তালুকের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: Fluffy french omelette: ব্রেকফাস্টে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু ফ্লপি অমলেট, কীভাবে? জেনে নিন রেসিপি